প্রথম দায়িত্ব জনগণের পক্ষে অবস্থান নেওয়া: নবনিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল

নবনিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানছবি: সংগৃহীত

নবনিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘আমার প্রথম ও সর্বপ্রথম দায়িত্ব হলো এই রাষ্ট্রের জনগণের পক্ষে অবস্থান নেওয়া।’ আজ বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে যোগদানের পর নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এই রাষ্ট্রের জনগণের অধিকার সংরক্ষণ করা এবং যারা সরকারে থাকবেন তাঁদেরও কিন্তু লক্ষ্য ও উদ্দশ্য হলো জনগণের নতুন যে সরকার আসছে, তারা এই রাষ্ট্রের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এসেছে।

এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামানকে নিয়োগ দেন। তার নিয়োগসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন আজ বৃহস্পতিবার জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৬৪ (১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের জে৵ষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামানকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ প্রদান করলেন। দেশের ১৭তম অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি এ এম আমিন উদ্দিনের স্থলাভিষিক্ত হলেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর গতকাল বুধবার ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বরাবর অব্যাহতিপত্র দেন এ এম আমিন উদ্দিন। এরপর পদটি শূন্য হয়। আজ নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেওয়া হলো।

যোগদানের পর মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম ও দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যাঁরা এই বাংলাদেশের মাটিতে মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে পরিশ্রম করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের দরবারে যিনি সমুজ্জ্বল করেছেন, পরিচিত করে তুলেছেন, দেশের গর্ব সূর্যসন্তান নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁকে ইতিমধ্যে আমাদের সংকটকালে কান্ডারি হিসেবে সামনে আনা হয়েছে। তাঁর প্রতি আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘যোগদান করতে এসে মুগ্ধ, আবু সাঈদ ও ওয়াসিম আকরামসহ বিগত কয়েক দিনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তাঁরা এ জাতির সূর্যসন্তান। জাতি সব সময় তাঁদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের এই মুক্তিযুদ্ধ দিবস আশা করি সরকার পালন করবে। যাতে করে তাঁদের অবদান চির অম্লান হয়ে থাকে।’

নিজেকে মানবাধিকারকর্মী পরিচয় দিয়ে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমার চেষ্টা থাকবে প্রজাতন্ত্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে দেশের আপামর জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমার কার্যালয় যেন অতন্দ্রপ্রহরীর মতো কাজ করে। এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালে যাঁরা জীবন দিয়েছিলেন, এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ২০২৪ সালে এসেও যাঁদের জীবন দিতে হয়, আমরা প্রত্যাশা করব আগামীর বাংলাদেশে হবে তাঁদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করার জন্য। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় যেন সেই লক্ষ্যে কাজ করতে পারে।’

অ্যাটর্নি জেনারেল কোনো দলের নন, রাষ্ট্রের

দলীয় অ্যাটর্নি জেনারেল, আপনি কি জনগণের অ্যাটর্নি জেনারেল হতে পারবেন—এমন প্রশ্নে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এটি পারসপেকটিভ নির্ভর করে। প্রথম কথা হলো, অ্যাটর্নি জেনারেল কোনো দলের নন। অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র একটি নির্দিষ্ট দল থেকে সরকার পরিচালনা করে। সেই সরকারের কিছু এজেন্ডা থাকে। সেই এজেন্ডাগুলো যখন আদালতের সামনে আসে, তখন সরকার আমার মক্কেল। আমি শুধু মক্কেলের অর্ডার ক্যারি করি।’

আদালতের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ এবং ‘বিতর্কিত বিচারপতিদের আইনজীবীদের অপসারণ দাবি’ নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, প্রথম কথা হলো, সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের সংবিধানের অভিভাবক। দেশের সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য ও মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য সুপ্রিম কোর্ট অনতিবিলম্বে খুলে যাওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, এই বাংলাদেশের যাঁরা কান্ডারি হবেন, যাঁরা দায়িত্ব নেবেন, তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন কোন প্রক্রিয়ায় এই দেশ চলবে, কী প্রক্রিয়ায় এই দেশটাকে এগিয়ে নেওয়া হবে। সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে যদি তাঁদের কোনো সংস্কার থাকে, সুপ্রিম কোর্টের যাঁরা বিচারপতি মহোদয়েরা আছেন, তাঁরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলে এই প্রক্রিয়াগুলো নির্ধারণ করবেন। সেখানে যদি আমার কোনো পরামর্শ লাগে, চেষ্টা করব তাঁদের সহাযোগিতার জন্য।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ ও দলকানা বিচারপতির বিষয়টি রাষ্ট্রের যাঁরা নীতিনির্ধারক তাঁরা দেখবেন। আমি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলও গঠন করতে পারি না, আমি কোনো বিচারপতিকে অপসারণও করতে পারি না। যেগুলো বলেছেন, নিতান্তই অভিযোগ। নিশ্চয়ই যাঁরা ক্ষমতা নেবেন, শপথ নেবেন, মন্ত্রিসভা গঠন করবেন, তাঁদের কাছে এই তথ্য আছে বা যাবে। তাঁরা সে অনুসারে ব্যবস্থা নেবেন।’

১৯৭১ সালের ৩১ জানুয়ারি ঝিনাইদহের শৈলকুপায় জন্ম মো. আসাদুজ্জামানের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক (সন্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৯৫ সালে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৯৬ সালে হাইকোর্ট বিভাগে আইন পেশা পরিচালনার অনুমতি পান। আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে ২০০৩ সালে তালিকাভুক্ত হন। গত বছর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সেক্রেটারি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।