সাতমসজিদ সড়কের গাছ কাটা বন্ধের দাবিতে মেয়র বরাবর ৩৭ নাগরিকের চিঠি
রাজধানীর ধানমন্ডির সাতমসজিদ সড়কের গাছ কাটা বন্ধ এবং যে জায়গার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, সেসব জায়গায় দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগানোর দাবি জানিয়েছেন ৩৭ জন নাগরিক। এ দাবি জানিয়ে তাঁরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র বরাবর চিঠি দিয়েছেন। আজ রোববার বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মেয়র বরাবর চিঠি পাঠানো ৩৭ নাগরিক হলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামাল; সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী; নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির; ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন; অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা; বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ; নগর–পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান; স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আহমদ কামারুজ্জামান মজুমদার; নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন; নারীপক্ষের সদস্য শিরিন হক; ব্রতীর নির্বাহী প্রধান শারমীন এস মুরশিদ; বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল; শিল্প ও জাদুঘর কিউরেটর আমিরুল রাজীব; অর্থনীতিবিদ নাঈম উল হাসান; ওয়ার্ক ফর আ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী; শিক্ষা সংস্কৃতি, বৈচিত্র্য ও জলবায়ু বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজের (বারসিক) পরিচালক পাভেল পার্থ; চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মো. জাকির হোসেন খান; গ্রীন ভয়েসের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আলমগীর কবির; নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের ইবনুল সাঈদ; নূর-ই-জাহান-সরোয়ার মুরর্শীদ কালচারাল সেন্টারের পরিচালক মুস্তাফা জামান; বারসিকের নির্বাহী কমিটির সদস্য জবা তালুকদার; আলোকচিত্র শিল্পী ইমতিয়াজ আলম বেগ; সিপিবির কেন্দ্রীয় সদস্য লাকী আক্তার; বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী; দৃশ্যশিল্পী সৈয়দ মাহমুদ জাকির; ইকিউএমএস কনসালটিং লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট ফেরদৌসি আকতার; উন্নয়ন কর্মী তন্ময় ধর; নেক্সাস টেলিভিশনের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সম্পাদক আমিন আল রশিদ; জল পুতুল পাপেটসের সাইফুল জার্নাল; শিক্ষার্থী ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি, জয়িতা রায়, সাদমান সাদিফ প্রাঞ্জল, আদৃতা রায়, আশিকুল ইসলাম, সিম্মল ধূলি।
বেলার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৩১ জানুয়ারি নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদার সৌন্দর্যবর্ধনের নামে সাতমসজিদ সড়কের গাছগুলো কাটা শুরু করলে স্থানীয় এলাকাবাসী, পরিবেশ ও সংস্কৃতিকর্মীরা সম্মিলিতভাবে ‘সাতমসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলন’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন। সাতমসজিদ সড়ক বিভাজকে বট, বড়ই, বকুল, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, শিরীষগাছগুলোর পাশাপাশি সেখানে বেশ কিছু তৃণগুল্ম ও লতাঝোপ আছে। ফলে এখানে বর্ষাকালে পাখি, পতঙ্গ, সরীসৃপ দেখা যায়, যা জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাছগুলো কোনোভাবেই সড়ক ও নাগরিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, বরং এই গাছগুলোই এত দিন এই সড়ক ও এলাকার সৌন্দর্যবর্ধন করেছে। এসব গাছ রেখেই সড়ক বিভাজকের সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধন করা সম্ভব।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে প্রায় তিন মাস গাছকাটা বন্ধ থাকলেও ১ মে আবার গাছকাটা শুরু হয়। গত তিন রাত, অর্থাৎ ৫, ৬ ও ৭ মে প্রায় ২০০ পরিণত ও সুস্থ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ঠিকাদারদের কাছে কার্যপত্র দেখতে চাইলে যে কার্যপত্র দেখান, সেখানে সড়ক বিভাজকে সৌন্দর্যবর্ধনের কথা থাকলেও গাছকাটার কোনো কথা নেই। তাই বলা যায়, গাছকাটার জন্য সিটি করপোরেশন, বন বিভাগ বা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাছকাটার বিরুদ্ধে সরকার ‘বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন, ২০১৬’ নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছিল। সাতমসজিদ সড়ক বিভাজকের গাছগুলো কেটে ফেলা সরকারের নীতিগত অবস্থানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পে অংশীজনদের অংশগ্রহণের কথা থাকলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অংশীজনদের সম্পৃক্তকরণ তো দূরে থাক, তাদের সুস্পষ্ট মতামত উপেক্ষা করছে।