পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে কমিশন গঠন প্রয়োজন

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭ বছর: প্রত্যাশা ও অগ্রগতি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় অতিথিরা। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, ২ ডিসেম্বরছবি: দীপু মালাকার

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়ন রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। অতীতে ক্ষমতায় যাওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের নানা স্বার্থের কারণে হয়তো এ চুক্তির বাস্তবায়ন করেনি। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের কোনো স্বার্থ থাকার কথা নয়। তাই চুক্তি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত একটি কমিশন গঠন করে দেওয়া।

পাশাপাশি এ সমস্যা সমাধানে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রয়োজন। যাতে পরে নির্বাচনের মাধ্যমে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, ওই দল চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করবে। সেখানেও অন্তর্বর্তী সরকার ভূমিকা রাখতে পারে।

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭ বছর: প্রত্যাশা ও অগ্রগতি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আলোচকদের কথায় এসব বিষয় উঠে আসে। আজ সোমবার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) সভাকক্ষে এ সভার আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন।

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নানা স্বার্থের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়ন করেনি। এদিকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো চুক্তি বাস্তবায়নের কোনো আলামত দেখা যায়নি। বরং পাহাড়কে কেন্দ্র করে আরও নানা সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সেখানকার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে অবিশ্বাস দানা বেঁধেছে। দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে এ চুক্তির বাস্তবায়ন জরুরি।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বর্তমান সরকার অসংখ্য কমিশন গঠন করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক কোনো কমিশন গঠন করেনি। পার্বত্য অঞ্চলের সমস্যা শুধু একটি বিশেষ অঞ্চল বা জেলার সমস্যা নয়। বাংলাদেশের বাকি ভূখণ্ডের শান্তি ও নিরাপত্তা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখনো সময় আছে, অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম–সম্পর্কিত একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠন করুন। সেখানে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অংশীজনদের যুক্ত করুন।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা গেলে চুক্তির বাস্তবায়নও সম্ভব।

বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, মানুষকে অবহেলা করার প্রবণতা রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে রয়েছে। এ কারণেই ২৭ বছর পরও সেই চুক্তির বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়াটা বড় দুর্ভাগ্যের বিষয়। পাহাড়ি জনগোষ্ঠী এখনো রাষ্ট্রের বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।

চুক্তি বাস্তবায়ন না করার জন্য পাহাড়ে নানা কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। তিনি বলেন, বাইরে থেকে লোক নিয়ে পাহাড়ে বসতি স্থাপন করিয়ে পাহাড়ের মানুষদের সংখ্যালঘু করা হয়েছে।

সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সরকারি ও বেসরকারি আগ্রাসন এখনো বন্ধ হয়নি। ইকোপার্ক, পর্যটনকেন্দ্রের নামে ভূমি দখল চলছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত রেখে বাংলাদেশ শান্ত হতে পারে না। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই পার্বত্য চট্টগ্রামেও গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য অনিক রায় বলেন, স্বাধীন বাংলায় আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এ সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সৃষ্ট জটিলতা সমাধান করতে হবে। চুক্তি বাস্তবায়নে নতুন করে আলোচনা প্রয়োজন।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী। চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্য দীপায়ন খীসার সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেনথেইন প্রমীলা, চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের আরেক যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন প্রমুখ।