যাত্রীসেবা
উড়োজাহাজের টিকিট বিক্রি ব্যাহত, ফ্লাইট বাতিল
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে সরকারের নির্দেশে দেশের ভেতরে সব ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ছিল। এ কারণে প্রথম আলো ডটকমে কোনো সংবাদ বা লেখা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। যদিও এ কয়েক দিনে নানা ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সংঘাত–সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ২০৪ জন। সংকট নিরসনে সরকারও একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ সময়ে ছাপা পত্রিকা নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য উল্লেখযোগ্য সংবাদ ও লেখাগুলো অনলাইনে প্রকাশ করা হলো। এই প্রতিবেদনটি গত রোববার (২১ জুলাই) ছাপা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
দেশে তিন দিন ধরে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ আছে। ফলে কোনো ট্রাভেল এজেন্সি টিকিট বিক্রি করতে পারছে না। উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর বিভিন্ন বিক্রয়কেন্দ্র থেকেও টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। যদিও বিমানবন্দরের বিক্রয়কেন্দ্র থেকে টিকিট নিতে পারছেন যাত্রীরা। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। যাত্রীরাও পড়ছেন নানা ভোগান্তিতে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ইন্টারনেট বন্ধের কারণে উড়োজাহাজ পরিচালনায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এতে কিছু কিছু ফ্লাইটের সময় পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে ইন্টারনেটের জন্য কোনো ফ্লাইট বাতিল হয়নি। বিমানবন্দরগুলোতে সীমিত পরিসরে নিজস্ব ইন্টারনেট পরিষেবা সচল আছে। তবে বৈশ্বিকভাবে মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার বিপর্যয় ও যাত্রী-স্বল্পতার কারণে গত দুই দিনে বিভিন্ন উড়োজাহাজ সংস্থার মোট ১১টি নির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার বিপর্যয় ও যাত্রী-স্বল্পতার কারণে দুই দিনে বিভিন্ন উড়োজাহাজ সংস্থার মোট ১১টি নির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
গত বুধবার রাত থেকে দেশে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ আছে। এরপর বৃহস্পতিবার বন্ধ করে দেওয়া হয় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে দেশে কারফিউ জারি করা হয়েছে। যদিও এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীদের কারফিউর আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। বিমানবন্দরে যেতে রাস্তায় চলাচলের জন্য তাঁদের উড়োজাহাজ টিকিট কারফিউ পাস হিসেবে গণ্য হবে।
গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিমানবন্দরে কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। দেশের সব বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা চলমান রয়েছে। চলমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ টিকিটের বাড়তি দাম নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইন্টারনেট না থাকায় সব ধরনের টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। একটা কঠিন অবস্থা পার করতে হচ্ছে।
উড়োজাহাজের টিকিট বিক্রি করার এজেন্সিগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সিজ অব বাংলাদেশ (আটাব) বলছে, দেশে উড়োজাহাজের টিকিট বিক্রয়ের জন্য চার হাজার এজেন্সি আছে। টিকিটের পাশাপাশি বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণের প্যাকেজ বিক্রি করে তারা। দিনে তাদের ১০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা তিন দিন ধরে পুরোপুরি বন্ধ আছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যেতে যাত্রীরা অনেক আগে থেকেই টিকিট করে রাখেন। তাঁরা এখন যাওয়া-আসা করছেন। অভ্যন্তরীণ গন্তব্যের জন্য কেউ কেউ তাৎক্ষণিক টিকিট করে থাকেন, তাঁরা বিমানবন্দরে গিয়ে টিকিট করতে পারছেন। তবে ইন্টারনেট না থাকায় বিমানবন্দরে যাত্রীদের সব কাজ ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ায় করতে হচ্ছে উড়োজাহাজ সংস্থার। এতে ফ্লাইট বিলম্ব হচ্ছে।
বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা ইউএস বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অগ্রিম টিকিট ছাড়া এয়ারলাইনস টিকতে পারে না। এখন অগ্রিম টিকিট বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ আছে। এখন সবকিছু ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ায় করতে হচ্ছে, ফ্লাইট দেরি হচ্ছে। তবে তাঁদের কোনো ফ্লাইট বাতিল হয়নি।
বিমানবন্দরে প্রবাসীদের বিভিন্ন সেবা দিতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শুধু একটি কম্পিউটারের মাধ্যমে তারা প্রবাসীদের ছাড়পত্রের (স্মার্টকার্ড) বৈধতা যাচাই করতে পারছে এখন। আবার ফ্লাইট বাতিলের তথ্য না জেনে যেসব প্রবাসী বিমানবন্দরে চলে আসছেন, তাঁরা ফিরে যাচ্ছেন। গতকাল সৌদি আরবের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ৬ জন নারী কর্মী দেশে ফিরেছেন। তাঁদের মধ্যে দুজনকে স্বজন নিয়ে গেছেন। বাকি চারজনকে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের আশ্রয়কেন্দ্র পাঠিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক।
টিকিট বিক্রি করতে না পারার বিষয়ে আটাবের সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ প্রথম আলোকে বলেন, বুকিংয়ের কমিশন থেকেই এজেন্সিগুলো পরিচালিত হয়। আর এসব বুকিং পুরোটাই অনলাইনে। ইন্টারনেট না থাকায় সবাই হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। সব ধরনের টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। একটা কঠিন অবস্থা পার করতে হচ্ছে।