পূজামণ্ডপে সংগীত পরিবেশন নিয়ে বিতর্ক, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আশ্বাস ডিসির
চট্টগ্রাম নগরে দুর্গাপূজার একটি মণ্ডপে অনুষ্ঠানের মঞ্চে বৃহস্পতিবার ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেছেন একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম রাতেই ওই পূজামণ্ডপে গিয়ে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে নগরের রহমতগঞ্জের জে এম সেন হলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ছয় সদস্য অনুষ্ঠানে দুটি গান পরিবেশন করেন। তার মধ্যে একটি গান ছিল ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম’। সংগঠনটি জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রায় ৩ মিনিটের ভিডিওটিতে দেখা যায়, ছয়জন তরুণ মঞ্চে গান পরিবেশন করছেন। এ সময় তাঁরা একটি ইসলামি সংগীত পরিবেশন করছেন। আশপাশে উপস্থিত কয়েকজনকে সেটি মুঠোফোনে ধারণ করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামান প্রথম আলোকে বলেন, পূজা উদ্যাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণেই সেখানে সংগীত পরিবেশন করতে গেছেন তাঁরা। সেখানে দুটো গান পরিবেশন করা হয়েছে, দুটোই সম্প্রীতির সংগীত। কেউ কেউ ভিডিও এডিট করে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই অনুষ্ঠানের ভিডিও যাচাই করে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার তাদের ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, পূজামণ্ডপে গানের ভিডিওটি আসল, এডিটেড নয়।
চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর (উত্তর) ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, এটি ছাত্রশিবিরের কোনো সংগঠন নয়। তবে জামায়েতে ইসলামীর একজন নেতা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন।
পূজা উদ্যাপন পরিষদ সূত্র বলছে, সন্ধ্যায় মঞ্চে নাচের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। এ সময় কয়েকজন তরুণ এসে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করবেন বলে মঞ্চে ওঠেন। তাঁরা দুটি গান পরিবেশন করেন। পরে তাঁরা ‘ধন্যবাদ’ দিয়ে নেমে চলে যান। তাঁরা গান গাওয়ার সময় কেউ তাঁদের নামায়নি বা প্রতিবাদ করেনি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন বলেন, পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তকে ওই তরুণেরা এসে বলেছেন, তাঁরা মঞ্চে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করবেন। পরে তাঁরা উঠে গান শুরু করেন। গান করা শেষে তাঁরা চলে যান। এ বিষয়ে জানতে সজল দত্তের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনার সময় সেখানে চট্টগ্রামের আদালত ঘোষিত সিটি মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম নগরের আমির শাহজাহান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শাহাদাত হোসেন ফোন ধরেননি। আর জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী বলেছেন, তিনি এদিন কোনো পূজামণ্ডপে যাননি।
পূজামণ্ডপে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে যান চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। এ সময় তিনি বলেন, এ ঘটনায় যারাই জড়িত হোক না কেন, তাদের ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে। এ বিষয়ে রাতের মধ্যেই মামলা নেওয়ার জন্য পুলিশ কমিশনারকে জানানো হবে।