জেলেদের ফেরত দেওয়া–নেওয়ার আলোচনায় বাংলাদেশ ও ভারত

মাথার পেছনে হাত দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন আটক বাংলাদেশি নাবিকেরা। পেছনে দাঁড়িয়ে ভারতীয় কোস্টগার্ডের সদস্যরা। ১০ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন ছবি পোস্ট করেছে ভারতীয় কোস্ট গার্ডছবি: ভারতীয় কোস্ট গার্ডের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া।

অন্য দেশের জলসীমায় ঢুকে পড়া জেলেদের নিজের দেশে ফিরিয়ে দেওয়া এবং ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৯২ জন জেলে ভারতে আর ভারতের ৯৫ জন জেলে বাংলাদেশে আটক রয়েছেন।

ভারতে আটক বাংলাদেশের ৯২ জেলেকে নিয়ে আজ রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয় বিষয়াবলি) মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ কোস্ট গার্ড, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, খুলনার হিরণ পয়েন্ট এলাকায় ভারতের জলসীমার কাছ থেকে ৯ ডিসেম্বর দুপুরে এফভি মেঘনা-৫ ও এফভি লায়লা-২ নামে মাছ ধরার দুটি জাহাজ ৮০ নাবিকসহ ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ভারত বলেছে, বাংলাদেশের নৌযান দুটি খুলনা বেল্টের হিরণ পয়েন্ট এলাকায় গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সময় তাদের জলসীমায় ঢুকে পড়েছে। এ জন্য নৌযান দুটি নাবিক ও জেলেসহ আটক করা হয়েছে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ১২ জন জেলে ভারতীয়দের হাতে আটক হয়। বাংলাদেশের ৯২ জন জেলে ও নাবিক ভারতে আটক রয়েছেন। অন্যদিকে গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে পড়ায় ভারতের ৯৫ জন জেলে ও নাবিককে আটক করা হয়েছে। তাঁদের খুলনা, বাগেরহাটসহ কয়েকটি জেলায় আটক রাখা হয়েছে।

আজ বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় সভায় দুই দেশের নাবিক ও জেলেদের বিনিময় বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ যেমন এ দেশের জেলে ও নাবিকদের ফেরত চেয়েছে, ভারতও এখানে আটক তাদের জেলে ও নাবিকদের ফেরত চাইছে।

বৈঠকে উপস্থিত এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, জলসীমা অতিক্রম করে এক দেশের জেলেদের অন্য দেশের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়াটা এবারই প্রথম নয়। ফলে অতীতেও এক দেশের জেলেরা অন্য দেশের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়লে আলোচনার মাধ্যমে ফেরত আনার নজির রয়েছে। কিন্তু ৫ আগস্ট–পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুই দেশের আলোচনার নানা প্রক্রিয়া কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়েছে। যেহেতু গত সপ্তাহে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে, এরই ধারাবাহিকতায় জেলে ও নাবিকদের ফেরানোর প্রক্রিয়ায় জটিলতা হবে না বলেই ধরে নেওয়া যায়। এখন নৌযান, নাবিক, জেলেসহ দুই পক্ষ কীভাবে একে অন্যকে সহায়তা করতে পারে তা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে মতবিনিময় করেছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরা।

আরেকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুই দেশ জেলেদের ফেরত দেওয়া–নেওয়া নিয়ে এর মধ্যেই আলোচনা শুরু করেছে। এখন কীভাবে এবং কবে তা শেষ হবে, সে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে দুই পক্ষকে। দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দুই দেশে আটক জেলে ও নাবিকদের ফেরত দেওয়া–নেওয়া সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

আরও পড়ুন