বার্ন ইনস্টিটিউটে আহত ৫ জন এখনো আশঙ্কাজনক, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে প্রধান করে বোর্ড গঠন
রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে আগুনের ঘটনায় আরও তিনজনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে যাঁরা রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসায় ১৭ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে দগ্ধ রোগীদের দেখতে আসেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এখানে ১১ জন ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৬ জনকে চিকিৎসকেরা ছাড়পত্র দিয়েছেন। তাঁদের শারীরিক অবস্থা ভালো।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বাকি পাঁচজনকে ভর্তি রাখা হয়েছে। তাঁদের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ১৭ সদস্যের এই মেডিকেল বোর্ডের প্রধান স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন নিজেই।
এদিকে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় নিহত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহজালাল উদ্দিন (৩৪), তাঁর স্ত্রী মেহেরুন নিসা জাহান হেলালি (২৪) এবং তাঁদের সাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিরার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, এ নিয়ে ৪৩টি মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি তিনটি মরদেহ ময়নাতদন্তের পর ডিএনএ নমুনা মিলিয়ে দাবিদারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে আগুন লাগে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জনকে।
পুলিশ বলেছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী ও ৮ শিশু। তাঁদের মধ্যে ৪৩ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে।
এ ঘটনায় গতকাল রাতে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। পুলিশ-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সালমান ফার্সী প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে আগুনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।
বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে আগুন লাগে। আগুনের ভয়াবহতা ও মৃত্যুর পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন গতকাল বেইলি রোডে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটিতে কোনো অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না। ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে তিনবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জানিয়েছে, ভবনটিতে রেস্তোরাঁ বা পণ্য বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কোনো অনুমোদন ছিল না।
আগুনের ঝুঁকি ও অনুমোদন না থাকার পরও ভবনটিতে আটটি রেস্তোরাঁ চলছিল বছরের পর বছর ধরে। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সেখানে খেতে ভিড় করেছিলেন নগরের বাসিন্দারা। কেউ গিয়েছিলেন শিশুসন্তানদের নিয়ে, কেউ গিয়েছিলেন স্বজনদের নিয়ে, কেউ গিয়েছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। কারও কারও জীবন চলত ওই ভবনে থাকা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে।