আট বছর আগে হোলি আর্টিজান বেকারির বিয়োগান্ত ঘটনায় লোকজন মুষড়ে পড়েছিল। বিশেষ করে ভারত, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বন্ধুপ্রতিম দেশের নাগরিকদের নির্বিচারে এমন হত্যার ঘটনা বাংলাদেশে নজিরবিহীন। সেদিনের ওই জঙ্গি হামলাকে কীভাবে দেখেন?
আন্তোনিও আলাসান্দ্রো: সেটি ছিল জঙ্গিবাদ ও উগ্র মতাদর্শ থেকে উদ্ভূত একটি জঘন্য সন্ত্রাসী হামলা, যার উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক আর বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়া। তাদের সেই অপচেষ্টা সফল হয়নি। দেশের জনগণের উদারতা আর সব ধরনের সংস্কৃতিকে বরণ করে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের পরিচিতি রয়েছে। বাংলাদেশের লোকজনের পাশাপাশি এখানে বসবাসরত বিদেশি সম্প্রদায় সক্রিয়ভাবে ওই সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। আমরা সবাই মিলে সংকট উত্তরণ করে সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে পেরেছি। আমরা এখন আস্থার সঙ্গেই ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে পারি।
বাংলাদেশ ও ইতালি দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন দিক দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সেই দুঃখজনক পর্বটি কীভাবে কাটিয়ে উঠল? দুঃখজনক সেই অধ্যায়কে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ ও ইতালি কীভাবে দুই দেশের সহযোগিতার নানা ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পেরেছে?
আন্তোনিও আলাসান্দ্রো: ১৯৭২ সালের শুরুতে স্বাধীন বাংলাদেশকে যেসব দেশ স্বীকৃতি দিয়েছিল, ইতালি ছিল তাদের মধ্যে প্রথম। তখন থেকে সব ক্ষেত্রেই আমাদের সম্পর্ক বিকশিত হয়েছে। হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা আমাদের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বরং নৃশংস ওই ঘটনা সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে সহযোগিতা জোরদার করেছে। সব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়িক ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক সম্প্রসারণে দুই দেশের আকাঙ্ক্ষা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আর ইতালির জনগণের শান্তিকামী মানসিকতাকে বিবেচনায় নিলে সন্ত্রাসী ওই হামলায় ইতালির জনগণের আক্রান্ত হওয়াটা বিস্ময়ের!
আন্তোনিও আলাসান্দ্রো: ইতালির নাগরিকদের বিশেষভাবে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, এমনটা আমরা বিশ্বাস করি না। ইতালীয় প্রবাসী একটি দলের ভুল সময়ে সেখানে উপস্থিত হওয়াটা কাকতালীয়ভাবে বিয়োগান্ত ছিল। আমি ইতালির নিহত ৯ নাগরিক ও তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি তাঁদের পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি এবং বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীসহ ক্ষতিগ্রস্ত সবার প্রতি আমার সংহতি প্রকাশ করছি। ইতালি দূতাবাস প্রতিবছর ১ জুলাই নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রতিফলনের জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ বছর অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও রোম থেকে সফররত ইতালীয় অভিবাসন নীতির মহাপরিচালক লুইগি মারিয়া ভিগনালি উপস্থিত থাকবেন।
সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলার পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রেক্ষাপটে ইতালি দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোর কথা ভাবছে কি না?
আন্তোনিও আলাসান্দ্রো: চিরাচরিতভাবে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা অত্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছি। কয়েক বছর ধরে দুই দেশের পুলিশ এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জন্য বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করা হয়েছে। আমরা এ কার্যক্রম বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মানোন্নয়ন ও আধুনিকীকরণে ভূমিকা রাখতে চাই, যা জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা কার্যক্রমের জন্য একটি বড় সম্পদ।