মির্জাপুরে কুমুদিনী কমপ্লেক্সে আন্তর্জাতিক ক্যানসার সম্মেলন শুরু ২২ মে

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন কুমুদিনী মহিলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবদুল হালিম। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর গুলশান অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত কুমুদিনী হ্যান্ডিক্র্যাফটস (হস্তশিল্প) কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় কুমুদিনী কমপ্লেক্সে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ক্যানসার ও প্যালিয়েটিভ সেবা সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার (২২ ও ২৩ মে) অনুষ্ঠেয় দুই দিনের সম্মেলনে দেশি বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি অংশ নেবেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, সিমন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের ক্যানসার থেরাপি ও প্যালিয়েটিভ সেবাবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর গুলশান অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত কুমুদিনী হ্যান্ডিক্র্যাফটস (হস্তশিল্প) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্যানসার অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার কনফারেন্স ২০২৪’ শিরোনামের সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করছে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের ওই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়।

প্যালিয়েটিভ কেয়ার হচ্ছে একধরনের বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ব্যথা ও উপসর্গ প্রশমনের জন্য এই সেবা দেওয়া হয়। এ ধরনের সেবায় রোগী সুস্থ না–ও হতে পারেন, তবে রোগীর আরাম হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত রণদা প্রসাদ সাহা প্রতিষ্ঠিত কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ৯০ বছর ধরে দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ১৯৪৯ সালে এই অঞ্চলে প্রথম রেডিওথেরাপি যন্ত্র স্থাপন করেন রণদা প্রসাদ সাহা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রণদা প্রসাদ সাহা ও তাঁর ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া যায়। তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। রণদা প্রসাদের আদর্শ অনুসরণ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী উন্নয়ন নিয়ে ট্রাস্ট কাজ করে যাচ্ছে। ট্রাস্ট নারায়ণগঞ্জে কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড ক্যানসার রিসার্চ নামে একটি বহুমুখী হাসপাতাল নির্মাণকাজ শুরু করেছে। ৩৫০ শয্যার হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসার জন্য ৫০টি শয্যা বরাদ্দ রাখা হবে। কমিউনিটিভিত্তিক প্যালিয়েটিভ সেবা দিতে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘মমতাময়ী কুমুদিনী’ নামের একটি প্রকল্প চালু করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে কুমুদিনী মহিলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং সম্মেলন আয়োজক কমিটির সচিব অধ্যাপক মো. আবদুল হালিম বলেন, এই সম্মেলনের লক্ষ্য হচ্ছে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে ক্যানসার ও প্যালিয়েটিভ সেবা বিষয়ে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসেবাদানকারী, গবেষক ও নীতিনির্ধারকদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা জানা। ২২ মে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা। সমাপনী দিনে ২৩ মে কুমুদিনী প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়ে একটি কর্মশালা হবে। কর্মশালাটি উদ্বোধন করবেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি।

‘মমতাময়ী কুমুদিনী’ প্রকল্প নিয়ে অধ্যাপক মো. আবদুল হালিম জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকার লোকজনকে সম্পৃক্ত করা হবে। প্রথম অবস্থায় মির্জাপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে কাজটি শুরু করা হবে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মাধ্যমে এলাকার লোকজনকে প্যালিয়েটিভ সেবা নিয়ে সচেতন করা হবে। যাঁদের বাড়িতে গুরুতর অসুস্থ রোগী ও বয়স্ক মানুষ রয়েছেন, তাঁরা কীভাবে রোগীর সেবা করবেন, তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ভারতের কেরালা রাজ্যের মডেল অনুসরণ করে প্রকল্পটি পরিচালনা করা হবে। সম্মেলনে কর্মশালাটি যৌথভাবে পরিচালনা করবে প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলাদেশ এবং কেরালার ইনস্টিটিউট অব প্যালিয়েটিভ মেডিসিন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কুমুদিনী নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ সিস্টার রিনা ক্লুজ, কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি) লিমিটেডের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা (সিএফও) মানিক কে সরকার এবং কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য মোহাম্মদ ফারুক।