বাংলাদেশে দমন–পীড়নে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার ক্ষুণ্ন: এইচআরডব্লিউ

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)
ছবি: এইচআরডব্লিউর ফেসবুক থেকে নেওয়া

সাধারণ নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের সদস্যদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন এবং সহিংসতা বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের অঙ্গীকার ক্ষুণ্ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের ২০২৪ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকার টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটপ্রক্রিয়ার বিষয়ে আস্থা না থাকায় প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে।

এইচআরডব্লিউ বলেছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার নির্বাচনের আগে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির আট হাজারের বেশি নেতা-কর্মী ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে। উদ্দেশ্য ছিল তাঁরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন আর বিরোধী নেতাদের অযোগ্য ঘোষণা করা যায়। অনেকেই ‘নিখোঁজ’ বলে দাবি করা হয়েছিল, যখন পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে ও শেষ পর্যন্ত আদালতে হাজির করার আগে তাঁদের কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ ধরে বেআইনিভাবে আটকে রাখা হয়।

বাংলাদেশি মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২০০৯ সাল থেকে ৬০০টির বেশি গুমের ঘটনা ঘটিয়েছে এবং প্রায় ১০০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র র‍্যাবকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসার পর গুম হওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের উচিত তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য অব্যাহত রাখার শর্ত হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিপীড়নের বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্তের জন্য জোর দেওয়া।

মীনাক্ষী গাঙ্গুলি আরও বলেন, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহির অভাব একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্কৃতিকে উসকে দিচ্ছে। ফলে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য, এমনকি ঘুষ দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত বা নিখোঁজ হওয়ার ভয়ে থাকেন বাংলাদেশিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগের জন্য বাংলাদেশে সাংবাদিকেরা ক্রমবর্ধমান আক্রমণের শিকার হয়ে আসছেন। নির্বাচনের আগে হওয়া বিক্ষোভে সহিংসতায় কয়েক ডজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার ২০২৩ সালে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেছে। এই আইনে রদ হওয়া আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেক বিষয় রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন ও সরকার সমালোচকদের শায়েস্তা করতে এই আইন ব্যবহার করা হয়েছে।