গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ের বাংলাদেশ তৈরির বিষয়ে ভাবতে হবে

বক্তৃতা দেন ব্রুনেইয়ের দারুসসালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইফতেখার ইকবালছবি : প্রথম আলো

আরও ১০০ বছরের চিন্তা করে একটি স্থিতিশীল, উদার, বহুত্ববাদী, গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ের বাংলাদেশ তৈরি করার বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এর জন্য তাকাতে হবে ইতিহাসের দিকে।

সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘বাংলা বদ্বীপের ইতিহাস মেরামতি: কিছু দিকচিহ্ন’ শীর্ষক এক বক্তৃতায় এসব কথা বলেছেন ব্রুনেইয়ের দারুসসালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইফতেখার ইকবাল। এটি ছিল জাতীয় নাগরিক কমিটির রাজনৈতিক বক্তৃতামালা সিরিজের প্রথম বক্তৃতা অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানের বক্তা অধ্যাপক ইফতেখার ইকবাল বলেন, বঙ্গীয় বদ্বীপ কোনো এক নৃগোষ্ঠীর জায়গা নয়। এখানে উড়িষ্যা থেকে দ্রাবিড়, উত্তর থেকে আর্য বা ইন্দো-আর্য আর পূর্ব দিক থেকে আমরা অস্ট্রিকদের পাই। তিনটি নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনাচরণ একটি মিথষ্ক্রিয়ার মধ্যে চলে এসেছে। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে তিনটির মধ্যে আধিপত্যশীল হয়ে যায় আর্যরা। এটা এখনো কার্যকর। উত্তর ভারত বা আর্যাবর্তের অধিনায়কেরা এখনো সেটি বলবৎ রাখার চেষ্টা করছেন। সেটির ফল আমাদের আজকের, এমনকি তিন মাস আগের কনটেক্সটের মধ্যেও ছিল। বুয়েটের আবরার ফাহাদ যে জমিন থেকে দাঁড়িয়ে উত্তর ভারতীয় আধিপত্যকে প্রশ্ন করছেন, সে রকমভাবে আড়াই হাজার বছর আগে একই বয়সী একজন মুণ্ডা বা সাঁওতাল ছেলে আর্যদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন।

ইফতেখার ইকবাল বলেন, বাংলাদেশে গত কয়েক শ বছর ধরে যে বিপ্লবী চেতনা, তা শক্তভাবে চলে এলেও স্থায়ী হয় না। আরও ১০০ বছরের চিন্তা করে আমরা কীভাবে স্থিতিশীল, উদার, বহুত্ববাদী, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করা যায় তা ভাবতে হবে। এই জায়গার জন্য ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে। ইতিহাসের বেড়া ও ফাঁকফোকরগুলোর দিকেও তাকানো প্রয়োজন। বাংলা গ্রামীণ সমাজ—এটা একটা মিথ। বাংলাদেশকে কেবল একটা গ্রামীণ নিদ্রিত জনগোষ্ঠী মনে করার সুযোগ নেই। এই শক্তিমত্তার দিকটা খুঁজে দেখা দরকার।

এক প্রশ্নের জবাবে এই অধ্যাপক বলেন, ইতিহাসের যেসব শক্তিশালী বয়ান দেখা যায়, সেগুলো হয়তো সত্যিকার ইতিহাস না–ও হতে পারে। বয়ানটাকে ভাঙতে পারলে দেখা যাবে জরাজীর্ণ অবস্থা। সেই ভাঙার কাজটা জুলাই বিপ্লবে হয়েছে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, সব ধরনের ধর্মমত, রাজনৈতিকভাবে নতুন মত তৈরি ও নতুন মতের আগমন নিশ্চিত করা—এই ধারাটা যেকোনো সংগঠনে প্রয়োজন। বৌদ্ধিক চর্চা ও চিন্তার চর্চা যাঁরা করেন, তাঁরাও যাতে রাজনীতিতে আসতে পারেন এবং দল বা সংগঠনের রাজনীতিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, সেই জায়গাগুলো আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। মাঠের রাজনীতিতে আমাদের স্লোগান, জমায়েত, সমাবেশ যেমন থাকবে, সেই সঙ্গে চিন্তার চর্চাগুলোও জারি রাখতে হবে।

আমাদের রিলিজিয়াস এবং সেক্যুলার—এই তর্কগুলো ভিন্নভাবে ভাবার সুযোগ আছে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার।

অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা এস এম সাইফ মোস্তাফিজ, শেখ তাসনিম আফরোজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।