‘ও পুত, বাকি পরীক্ষা কে দেবে’

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে সরকারের নির্দেশে দেশের ভেতরে সব ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ছিল। এ কারণে প্রথম আলো ডটকমে কোনো সংবাদ বা লেখা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। যদিও এ কয়েক দিনে নানা ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সংঘাত–সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ২১০ জন। সংকট নিরসনে সরকারও একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ সময়ে ছাপা পত্রিকা নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য উল্লেখযোগ্য সংবাদ ও লেখাগুলো অনলাইনে প্রকাশ করা হচ্ছে। এই প্রতিবেদনটি ২০ জুলাই (শনিবার) প্রকাশিত হয়েছিল।

গুলিতে নিহত কলেজছাত্র তানভীর আহমদের বাবা বাদশা মিয়ার আহাজারি। ১৮ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেছবি: প্রথম আলো

‘ও পুত (ছেলে), চারটা পরীক্ষা দিলি। বাকি পরীক্ষাগুলো কে দেবে? পরীক্ষায় পাস করলে আমরা চট্টগ্রামে চলে আসতাম। বাসা নিয়ে থাকতাম।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের লাশঘরের সামনে বাদশা মিয়া এভাবে বুক চাপড়ে আর্তনাদ করছিলেন। তাঁর বুকের ধন তানভীর আহমেদ লাশঘরে শুয়ে আছে। নগরের আশেকান আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের ছাত্র তানভীর গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের বহদ্দারহাট মোড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন। এই শিক্ষার্থীকে সন্ধ্যায় হাসপাতালে আনার কিছুক্ষণ পর মারা যান।

খবর পেয়ে রাত সোয়া ১০টায় তানভীরের বাবা বাদশা মিয়া হাসপাতালে ছুটে আসেন। তিন ছেলের মধ্যে বড় তানভীর। তাঁদের বাড়ি কক্সবাজারের মহেশখালীতে। বাদশা মিয়া পান বিক্রেতা। পানের বরজে কাজও করেন। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে চট্টগ্রামে পাঠিয়েছেন পড়ালেখা করার জন্য। নগরের ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকায় একটি ব্যাচেলর বাসা নিয়ে থাকতেন তানভীর। চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় তিনি চারটি পরীক্ষা দেন বলে জানান বাদশা মিয়া।

বাদশা মিয়া বিলাপ করে বলেন, ‘ও বাপ, কী জন্য ঘর থেকে বের হলি? তুই কেন বের হলি? আমি এখন কাকে নিয়ে দিন কাটাব। তোরে নিয়ে যে অনেক আশায় ছিলাম।’

বাদশা মিয়ার অপর দুই ছেলে স্কুলে পড়ে। তিনি নিজে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় পান বিক্রি করেন। গত মঙ্গলবার রাতে ছেলের সঙ্গে বাদশা মিয়ার শেষ কথা হয়। ছেলেকে তিনি বের হতে নিষেধও করেছিলেন।