শিক্ষার্থী গুপ্তহত্যার বিষয়ে সরকার কী করবে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে হবে

রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যালয়ে আজ বুধবার বিকেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিনছবি: প্রথম আলো

শিক্ষার্থীদের ‘গুপ্তহত্যা’র বিষয়ে সরকার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে বলেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেছেন, অভ্যুত্থানের সময় ছাত্ররা মাঠের শক্তি ছিল। ছাত্র-জনতা মিলে এই অভ্যুত্থান করেছে। অথচ আমরা দেখছি নানা জায়গায় শিক্ষার্থী গুপ্তহত্যা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যদি সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না দেখি তাহলে প্রশ্ন করতে হয় সরকারে আসলে কারা আছে?

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সামান্তা শারমিন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশ একটা নিরাপদ দেশ হোক, এ মুহূর্তে এটাই চাচ্ছি। কিন্তু ছাত্ররা যদি অনিরাপদ হয়ে যায়। তাদের যদি এভাবে গুপ্তহত্যা করা হয়, তাহলে সরকারে কারা আছে, সেই প্রশ্ন করতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘সরকারে কারা আছে এবং কারা নীতিনির্ধারণী জায়গাগুলোয় আছে, এই গুপ্তহত্যার ব্যাপারে কী অবস্থান গ্রহণ করবে, কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের জানাতে হবে।’

জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের টাইমস্কেল-সংক্রান্ত বিধির বিপরীতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০২০ সালের আগস্ট মাসে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সংবাদ সম্মেলনে দেশের ৬৪টি জেলা থেকে আগত শিক্ষক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয় তৎকালীন সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় এসব বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৪ হাজার ৭৭২ জন শিক্ষকের চাকরি সরকারি হয়। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রের কারণে এই শিক্ষকদের মধ্য থেকে ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষক আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে দাবি করে আন্দোলন করে আসছেন এই শিক্ষকেরা। ‘জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষক মহাজোট’-এর ভাষ্য, পৌনে আট বছর পর শিক্ষকদের ভোগ করা টাইমস্কেল ফেরত নিতে ‘অন্যায়ভাবে’ ২০২০ সালের ১২ আগস্ট ওই পত্র জারি করা হয়।

সরকার এসব শিক্ষকের দাবির বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সরকারকে মনে রাখতে হবে, তারা অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার। তাদের মন্থর গতি অভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এই শিক্ষকেরা অনেকাংশেই শিক্ষার্থীদের আশ্রয় (জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে) দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তাঁদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। শিক্ষাসহ শিক্ষকদের যত অসুবিধা আছে, বেতনকাঠামো আছে, এগুলোকে আন্তর্জাতিক কাঠামোতে নেওয়ার পক্ষে অবস্থান জানান সামান্তা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ফয়সাল মাহমুদ বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি শিক্ষকদের অবর্ণনীয় কষ্ট লাঘবে বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে জরুরি ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানে নিম্নবর্ণিত দাবি বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। তাদের দুই দফা দাবি হচ্ছে—অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা পত্রটি বাতিল করতে হবে এবং উল্লিখিত প্রজ্ঞাপনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষকেরা যেন কোনো প্রকার হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে।