বাইরে কী হচ্ছে, এগুলো কোর্টে আনবেন না: ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে হাইকোর্ট

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

হাইকোর্টে এক মামলার শুনানিতে একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আগুন–সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলেছেন। তখন আদালত তাঁকে বলেছেন, বাইরের বিষয় কোর্টে আনবেন না।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার একথা বলেন। এই আদালতে আজ ১০ বছর আগে হেফাজতে ইসলামের অবরোধ কর্মসূচি ও শাপলা চত্বরে সমাবেশ ঘিরে নাশকতার অভিযোগে শাহবাগ থানায় করা এক মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর জামিন আবেদনের শুনানি চলছিল। আদালতে এই মামলার শুনানি দুই মাসের জন্য মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করেছেন হাইকোর্ট।

শুনানির একপর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘কাল (শনিবার) থেকে আবার আগুন–সন্ত্রাস শুরু হয়ে গেছে।’ এ সময় তাঁকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘কী হচ্ছে, তা আমাদের কোর্ট আনবেন না, এগুলো বাইরের বিষয়।’

হেফাজত–কাণ্ডে ২০১৩ সালের ৬ মে শাহবাগ থানায় ওই মামলা হয়। মামলায় নিম্ন আদালতে বিফল হয়ে গত বছর হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসলাম চৌধুরী। শুনানি নিয়ে গত বছরের ৪ এপ্রিল হাইকোর্ট ওই মামলায় আসলাম চৌধুরীর জামিন প্রশ্নে রুল দেন। রুল শুনানির জন্য উঠলে হাইকোর্ট তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে জানাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে হাজির হতে নির্দেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক হারুন উর রশীদ আজ আদালতে হাজির হন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন মীরধা শুনানিতে ছিলেন। আসলাম চৌধুরীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ মাসুদ উল হক।

শুনানিতে তদন্ত কর্মকর্তার উদ্দেশে আদালত বলেন, পুলিশ রিপোর্ট দিচ্ছেন না কেন? কবে পারবেন? তখন তদন্ত কর্মকর্তা হারুন উর রশীদ বলেন, সময় লাগবে। মামলায় অনেক আসামি।

আদালত বলেন, এই মামলায় কতজন আসামি? তখন আসলামের আইনজীবী মাসুদ উল হক বলেন, এজাহারে ১৮০ জনের নাম রয়েছে। তাঁরা জামিনে আছেন। আসলাম চৌধুরীর নাম এজাহারে নেই। ঘটনার ৮ বছর পর ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর ওই মামলায় আসলাম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর বলেন, এ মামলার আসামির (আসলাম চৌধুরী) বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার উৎখাতের অভিযোগ রয়েছে।

এ সময় আদালত বলেন, ‘উনি ইসরায়েল নাকি আমেরিকা গেছেন, এ নিয়ে বলছি না।’ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল সময়ের আরজি জানান।

এরপর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, হেফাজত–কাণ্ডের এক মামলায় আসলাম চৌধুরীকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছিলেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। পরে এই স্থগিতাদেশ আপিল বিভাগ বহাল রাখেন। আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৩৯টির মতো মামলা রয়েছে।

আসলাম চৌধুরীর আইনজীবী মাসুদ উল হক বলেন, মোসাদের ঘটনায় করা ওই মামলাসহ অপর মামলাগুলোতে আসলাম চৌধুরী জামিনে আছেন।

তদন্ত কর্মকর্তার উদ্দেশে আদালত বলেন, এক মাসের মধ্যে পারবেন (তদন্ত শেষ করতে)? তখন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর বলেন, তিন মাস সময় দেন। আদালত বলেন, দুই মাস দিচ্ছি। দুই মাসের জন্য স্ট্যান্ডওভার রাখা হলো।

রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে ২০১৬ সালের ১৫ মে আসলাম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ফৌজদারি কার্যবিধির (সন্দেহজনক) ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর ওই বছরের ২৬ মে আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়। মামলায় আসলামের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘বাংলাদেশের সরকার উৎখাত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ’ আনা হয়।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন