শান্ত সাগর সেই প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়কে মনে করিয়ে দিচ্ছে
‘দইজ্যা গুম ধরি আছে। এনগরি ঠান্ডা অই যন ভালা ন। এইবারা ঝাটকা ওগ্গা মারিবু মনে অর।’ (সাগর গুম ধরে আছে। এভাবে শান্ত হয়ে যাওয়া খারাপ লক্ষণ। একটা ঝাটকা মারবে মনে হচ্ছে)। চট্টগ্রামের হালিশহর আকমল আলী সড়ক জেলেপল্লির বাসিন্দা চারুবালা দাস এভাবে ঝড়ের শঙ্কা প্রকাশ করেন। ষাটোর্ধ্ব চারুবালা ’৯১–এর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়টি দেখেছেন। আজ শনিবার বিকেলে একটি জাল নিয়ে তিনি মাছ ধরছিলেন সাগরের পাশে।
চারুবালা বলেন, ‘আমি তখন ভেসে যাওয়া দুটি শিশুকে বাঁচিয়েছিলাম। পুরো হালিশহর পানিতে ভেসে গিয়েছিল।’
ঘূর্ণিঝড় মোখার আগে সাগর এভাবে শান্ত হয়ে যাওয়াকে ভয়ংকর ঝড়ের পূর্বাবস্থা মনে করছেন চারুবালা।
আকমল আলী সড়কের জেলেপল্লি থেকে লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে অনুরোধ করছে প্রশাসন। বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও অনেকে ঘরে রয়ে গেছেন। শেষ মুহূর্তে ঘরের জিনিসপত্র গোছগাছ করছিলেন।
সুবাস দাস সাগরপারে জাল ভাঁজ করছিলেন। তিনি বলেন, সাগরে এভাবে শান্ত হয়ে যাওয়া মানে খারাপ লক্ষণ। গরম হতে সময় লাগবে না। আজ সকাল থেকেই সাগর শান্ত। কী জানি কী হয়। সাগরে এখন জোয়ার।
গত বছরের অক্টোবরে সিত্রাংয়ের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল জেলেপল্লিটি। ঘূর্ণিঝড় মোখা আসার আগে সাগরের পরিস্থিতি দেখার জন্য অনেকে ভিড় করেন। কেউ পরিবার নিয়ে কেউবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে বেড়াতে এসেছেন পতেঙ্গায়। হালিশহর খাজা গরীবে নেওয়াজ উচ্চবিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকও সাগরের পরিস্থিতি দেখতে আসেন।
শিক্ষক নুরুল কাদেরের বাড়ি বাঁশখালীতে। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি হালিশহরে থাকেন। ১৯৯১–এর ঝড়েও শহরে ছিলেন। এবারের সাগরের অবস্থা সেবারের সঙ্গে মিল আছে বলে তাঁর মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, ’৯১–এর ঝড়ের আগেও সাগর শান্ত হয়ে গিয়েছিল। এরপর সন্ধ্যা থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। রাত ১২টা থেকে শুরু হয় তাণ্ডব।
সেবার ঘূর্ণিঝড়ে হালিশহর পতেঙ্গা এলাকা ডুবে গিয়েছিল। গরীবে নেওয়াজ স্কুলেও পানি ঢুকেছিল বলে জানান নুরুল কাদের। তখন পতেঙ্গার বর্তমান বেড়িবাঁধটি এতটা উঁচু ছিল না।
সরকারি হিসাবেই ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের সেই ঘূর্ণিঝড়ে দক্ষিণ চট্টগ্রাম উপকূলে নিহত হয়েছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৩৯ জন। সম্পদ নষ্ট হয়েছিল কয়েক হাজার কোটি টাকার।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, সাগর এখন শান্ত। তবে ঝড় কাছে এলে সাগর উত্তাল হয়ে উঠবে। ঝড়ের কেন্দ্রে এখন বাতাসের গতিবেগ ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত আছে। আঘাত করার সময় তা আরও বেড়ে যেতে পারে।