গ্রাফিতি আঁকায় দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল ইউল্যাব, পরে প্রত্যাহার
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গ্রাফিতি আঁকায় তাদের দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল। গ্রাফিতি আঁকাকে সম্পদের ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করেছিল তারা।
অবশ্য দুই শিক্ষার্থীর শাস্তি প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা আরও জানিয়েছে, গ্রাফিতি মুছে ফেলার নির্দেশও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সারা দেশেই শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকা শুরু করেন। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
ওই সময় ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরাও তাঁদের ক্যাম্পাসের পার্কিং শেডের (গাড়ি রাখার স্থান) দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকেন। এ ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী ইবতেশাম চৌধুরী ও দেবাশীষ বণিককে ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ ডেকে নেয় গত ১৫ ডিসেম্বর।
শিক্ষার্থীরা জানান, ২৯ ডিসেম্বর তাঁদের চিঠি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, তাঁরা সম্পদের ক্ষতিসংক্রান্ত নীতি অনুসারে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাঁরা আগামী ‘স্প্রিং সেমিস্টারে’ ডিসিপ্লিনারি প্রবেশনে থাকবেন। ইউল্যাব যদি মনে করে, তাহলে তাঁরা পুরস্কার ও আর্থিক সুবিধাদি পাওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
চিঠিতে গ্রাফিতি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মুছে ফেলার জন্য বলা হয়। সতর্ক করা হয়, পরবর্তী সময়ে আর কোনো নীতি লঙ্ঘন করলে দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে গতকাল সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইমরান রহমান একটি বিবৃতি পাঠান। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওয়াইডার কমিউনিটি’র সঙ্গে কোনো পরামর্শ বা নোটিশ ছাড়া ক্যাম্পাসের ভেতরে গ্রাফিতি আঁকায় দুই শিক্ষার্থীকে মৃদু সতর্ক (ডিসিপ্লিনারি প্রবেশন) করা হয়েছিল। তবে তাঁরা তাঁদের শিক্ষা কার্যক্রম কোনো বাধা ছাড়াই চালিয়ে যেতে পারবে।
উপাচার্য আরও বলেন, গ্রাফিতি মুছে ফেলা হয়নি। মুছে ফেলার জন্য যে অনুরোধ করা হয়েছিল, তা–ও প্রত্যাহার করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের মুক্ত ও সৃজনশীল মতপ্রকাশকে সমর্থন করে এবং ক্যাম্পাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গ্রাফিতি আঁকার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
উপাচার্য আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে জানান, দুই শিক্ষার্থীর ডিসিপ্লিনারি প্রবেশনও তুলে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখে পড়া শিক্ষার্থীদের একজন ইবতেশাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এমন কিছু আঁকেননি, যার কারণে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তাঁদের দাবি, ইউল্যাব পাবলিকলি (প্রকাশ্যে) বিবৃতি দিয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেবে।
এর আগে এ ঘটনায় ইউল্যাবের অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক সুমন রহমান, প্রভাষক অলিউর রহমানসহ ১১ জন শিক্ষক একটি যৌথ বিবৃতি দেন।
দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নেওয়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জনপরিসরে শিল্প ও মতপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে দেয়াললিখন ও গ্রাফিতি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও দেশের আপামর জনসাধারণের পাশাপাশি ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরাও তাঁদের নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন গ্রাফিতি অঙ্কন করেছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গ্রাফিতিকে শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ধারণ করে আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান না করে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং তার কাঙ্ক্ষিত মাধ্যম ও স্থান বিষয়ে ভাবনা পুনঃপর্যালোচনা এবং প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আচরণবিধি সংশোধনের দাবি রাখে।