মানব পাচার রোধে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের ‘টিআইপি হিরো’ পুরস্কার পেলেন আল-আমিন

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন আল-আমিনছবি: সংগৃহীত

মানব পাচারবিরোধী লড়াইয়ে ভূমিকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ‘টিআইপি হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বাংলাদেশের আল-আমিন (নয়ন)। আজ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মানব পাচারবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।

আল-আমিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থাপক। তিনি বিদেশফেরত ও পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সহায়তায় কাজ করেন। দক্ষিণ এশিয়ায় তিনি ছাড়া এ বছর আর কেউ এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পাননি। আল-আমিনের পাশাপাশি কেনিয়া, মালি, ফিলিপাইন, সার্বিয়া, স্পেন, সুরিনাম, বলিভিয়া ও ইরাকের একজন করে মোট ৯ জন ২০২৪ সালে টিআইপি হিরোর স্বীকৃতি পেয়েছেন।

বিশ্বজুড়ে মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিবেদিতভাবে কাজ করছেন, এমন ব্যক্তিদের ২০০৪ সাল থেকে প্রতিবছর সম্মানিত করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। এ বছর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘সারা বিশ্ব থেকে নির্বাচিত ৯ জন টিআইপি হিরোকে ধন্যবাদ। আমাদের এই নায়কেরাই সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন।’

পুরস্কার পাওয়ার পর আল-আমিন বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় কাজ করতে গিয়ে আমি নিজে পাচারের শিকার হয়েছিলাম। পরে দেশে ফিরে অনিয়মিত অভিবাসন ও পাচারের শিকার মানুষের পাশে থাকার কাজে যুক্ত হই। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার হিসেবে বিদেশফেরত অসহায় মানুষ ও সারা দেশে পাচারের শিকার মানুষের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করি। এই কাজ করতে গিয়ে বহুবার নানা বিপদে পড়তে হয়েছে। এমনকি জেলেও গিয়েছি। এই পুরস্কার আমাকে আরও বেশি করে মানুষের জন্য কাজ করতে উৎসাহিত করবে।’

সোমবার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মানবাধিকারকর্মী আল-আমিন সম্পর্কে বলা হয়, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীরা কোনো বিপদে পড়লে সবার আগে ছুটে যান তিনি। ২০০৭ সালে মালয়েশিয়ায় কাজ করতে গিয়ে পাচারের শিকার হলেও আজ বিদেশফেরত মানুষকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখান তিনি। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার হিসেবে বিদেশফেরত ও পাচারের শিকার অন্তত ৩৪ হাজার মানুষকে তিনি সহায়তা করেছেন।

আল-আমিন ২০০৭ সালে কাজের উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়ায় গিয়ে মানব পাচারের শিকার হয়ে সে বছরই দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে শুরু করেন নিজের অধিকার ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের লড়াই। পাশাপাশি যুক্ত হন মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি ও প্রবাসীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। ২০১৭ সালে তিনি ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামে কাজ শুরু করেন। এর পর থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীরা কোনো বিপদে পড়লেই ছুটে যান তিনি।

করোনা মহামারির সময় দেশে ফেরা প্রবাসীদের খাবার, চিকিৎসা, পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়াসহ যেকোনো সংকটে আল-আমিন কাজ করেন। বিমানবন্দরে মানসিকভাবে অসুস্থ বা ঠিকানাহীন কোনো কর্মী দেখলেই প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক কিংবা বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ তাঁকে ফোন দেয়।

বাংলাদেশে মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক ‘অনির্বাণ সারভাইভার ভয়েস’-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আল-আমিন। এসব কাজ করতে গিয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়, যা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক দাবি করে তাঁকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানায় অভিবাসন ও অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সব সংগঠন। বর্তমানে তিনি এ মামলায় জামিনে আছেন।

আরও পড়ুন