উপকূলীয় এলাকায় পানির কারণে নারীর প্রজননস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে
উপকূলীয় এলাকায় পানির লবণাক্ততার কারণে নারীর যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। লবণপানি ব্যবহারের কারণে নারীদের সাদা স্রাব ও ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হয়। যোনিপথে চুলকানি হয়। যৌন মিলনে সমস্যা হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই স্বামীরা স্ত্রীদের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটান। অনেক স্বামী বহুবিবাহ করেন। এই পরিস্থিতিতে নারী সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দুরবস্থার শিকার হন।
আজ সোমবার রাজধানী ঢাকায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
মিরপুরে এমজেএফ টাওয়ারের আলোক মিলনায়তনে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ (২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর) পালন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল ‘জেন্ডার সমতা অর্জনে সহিংসতা প্রতিরোধ এবং যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য অধিকার সুরক্ষায় বিনিয়োগ’।
অনুষ্ঠানে ‘নারীর যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যে লবণাক্ততার প্রভাব: বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ওপর একটি গবেষণা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফি বিনতে আকরাম। সুইডেন দূতাবাসের অর্থায়নে ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ নিযুক্ত সুইডিশ রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্সান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে বলেন, যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য ও অধিকারের লড়াই নারীর একার কাজ নয়। লিঙ্গভিত্তিক (জেন্ডার) সমতা অর্জনে ঘর থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত কাজ করতে হবে।
ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডীয় হাইকমিশনার লিলি নিকোলস বলেন, বাংলাদেশে অনেক নীতিমালা ও আইন হচ্ছে। তবে আইনের প্রণয়ন ও প্রয়োগ, জবাবদিহি ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব নারীর প্রতি সহিংসতার উল্লেখযোগ্য কারণ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘ঘরে ঘরে কত নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছেন, তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা আমরা জানি না। আমরা বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়েও কথা বলি না। আজকের আয়োজনে উপকূলীয় অঞ্চলের সমস্যাও আমাদের ধাক্কা দিয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর দিকে নজর বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের বাজেটের সময় লক্ষ রাখতে হবে সব ধরনের অংশীদারেরা যেন অন্তর্ভুক্ত থাকে।’
সভাপতির বক্তব্যে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, সহিংসতা প্রতিরোধে নানামুখী ব্যবস্থা প্রয়োজন। প্রত্যেকের ক্ষেত্রে সহিংসতার ধরনে পার্থক্য থাকে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) উম্মে রুমান সিদ্দিকী, ইউএন উইমেনের কর্মসূচি বিশ্লেষক শ্রবণা দত্ত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের টিম লিডার (অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন প্রতিনিধিত্ব) ও ফার্স্ট সেক্রেটারি এনরিকো লরেনজো, কানাডীয় হাইকমিশনের সহায়তা প্রধান জো গুডিংস।
আলোচনা শেষে একটি নাটক মঞ্চায়িত হয় এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও নারীর ঝুঁকির বিষয়ের ওপর আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।