রাজস্ব ফাঁকি: পরোয়ানা জারির ৩৩ মাস পর আদালতে মেয়র
রাজস্ব ফাঁকির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ৩৩ মাস পর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন পাবনার বেড়া পৌরসভার মেয়র এস এম আসিফ শামস। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসারের আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোনিয়া হোসেন জিসান মেয়র এস এম আসিফ শামসকে জামিন দেন।
প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোনিয়া হোসেন জিসান।
মেয়র এস এম আসিফ শামস জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছেলে। তিনি পাবনার বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভিশন টেল লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম আসিফ শামসসহ চারজনের বিরুদ্ধে সরকারের ১৯১ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে মামলা করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সেই মামলায় ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আসিফ শামসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার জেনারেল সার্টিফিকেট আদালতের তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরীন হক। পরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের জন্য তা পাঠানো হয় পাবনার বেড়া থানায়।
৩৩ মাসেও কেন আদালতের পরোয়ানা কার্যকর করা হয়নি, সে বিষয়ে বেড়া থানার সদ্য বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রশিদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি বেড়া থানায় যোগ দেন। পরে জানতে পারেন, বেড়া পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন।
আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল না হওয়ার বিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেড়া সার্কেল) আবুল কালাম আজাদ আজ শুক্রবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বেড়া পৌরসভার মেয়র এস এম আসিফ শামসের বিরুদ্ধে আদালতের পরোয়ানা থাকার তথ্য তাঁকে থানার ওসি জানাননি। তবে দুই দিন আগে সংবাদমাধ্যমে মেয়র আসিফ শামসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার তথ্য জানতে পারেন।
এদিকে ৩৩ মাস পর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেওয়ার পর ঢাকার জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসারের আদালত থেকে মেয়র এস এম আসিফ শামসের বিরুদ্ধে জারি করা পরোয়ানা ফেরত চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বেড়া থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পাওয়া পুলিশ কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলাম আজ শুক্রবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগের ওসি কেন মেয়র এস এম আসিফ শামসের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করেননি, সেটি তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে গতকাল তিনি থানায় যোগ দেওয়ার পর আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকার জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসারের আদালত থেকে একটি কাগজ হাতে পেয়েছেন। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, মেয়র এস এম আসিফ শামস গতকাল আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন। যে কারণে তাঁর বিরুদ্ধে জারি করা পরোয়ানা বিনা তামিলে ফেরত পাঠানো হোক।’
৩৩ মাস আগে আসিফ শামসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির হলেও তিনি দেশেই অবস্থান করেন। কিন্তু আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করেননি। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য আজ শুক্রবার একাধিকবার মেয়র আসিফ শামসের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে মেয়র আসিফ শামস গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, বিটিআরসির অনুমতি নিয়ে ২০১৩ সালে তিনি ভিশন টেল লিমিটেড থেকে বের হয়ে আসেন। মামলা হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার বিষয় তিনি জানতেন না। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার তথ্য জানার পর তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন।
অবশ্য বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টের ঢাকা ইউনিটের সমন্বয়কারী আইনজীবী মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ৩৩ মাস আগে একজন মেয়রের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরও সেটি তামিল হয়নি কিংবা তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি, এটি অস্বাভাবিক ঘটনা। কারও নামে মামলা হলে কিংবা আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে যত দ্রুত সম্ভব বিচারের মুখোমুখি হওয়া একজন সুনাগরিকের দায়িত্ব। আইন সবার জন্য সমান। পুলিশের দায়িত্ব আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করা।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করা পুলিশের দায়িত্ব। আদালতের যেসব পরোয়ানা কার্যকর হয়নি তার তালিকা প্রতি সপ্তাহেই জেলার পুলিশ সুপার এবং মহানগরের পুলিশ কমিশনারের কাছে দিতে হয়। তারপরও ৩৩ মাস কীভাবে আদালতের পরোয়ানা বিনা তামিলে পড়ে থাকল, সেটি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখতে পারে।