আজকে আমরা অনেকক্ষণ খাঁচার মধ্যে ছিলাম, এটা অত্যন্ত অপমানজনক: মুহাম্মদ ইউনূস
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আজকে আমরা অনেকক্ষণ খাঁচার (আসামির কাঠগড়া) মধ্যে ছিলাম। বলা হয়েছিল, আপনি থাকেন। কিন্তু আমরা সারাক্ষণ লোহার খাঁচার মধ্যে ছিলাম। আমি আগেও প্রশ্ন তুলেছি, এটা ন্যায্য হলো কি না? আমি যত দূর জানি, যত দিন আসামি অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত না হচ্ছে, তত দিন তিনি নিরপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবেন।’
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আজ বুধবার অভিযোগ গঠন করেছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪। পরে আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন মুহাম্মদ ইউনূস।
ক্রমাগতভাবে হয়রানির মধ্যে আছেন বলে মন্তব্য করেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘মানি লন্ডারিং, অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা—এসব শব্দের সঙ্গে পরিচিত নই। অথচ এসব শব্দ আমার ওপর আরোপ করা হচ্ছে। আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সারা জীবন তো আমরা মানুষের সেবায় কাটিয়েছি। আমরা নিজেদের অর্থ ব্যয় করে এসেছি। এটাই আমাদের ইতিহাস। কিন্তু আমাদের বোধে আসছে না কেন এই হয়রানি করা হচ্ছে?’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি রক্তচোষা, আমি সুদখোর, আমি দেশের শত্রু, আমি পদ্মা সেতুর অর্থ আটকে দিয়েছি, চারদিকে ষড়যন্ত্র করে বেড়াই—কথার কথা এভাবেই বলা হচ্ছে। এগুলোই হচ্ছে হয়রানি। আমাকে জোর করে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘একজন নিরপরাধ নাগরিককে লোহার খাঁচার (আসামির কাঠগড়া) মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে শুনানির সময়, এটা আমার কাছে অত্যন্ত অপমানজনক। এটা গর্হিত কাজ। এটা কারও ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য না হয়। একটা পর্যালোচনা হোক।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘একটা সভ্য দেশে কেন একজন নাগরিককে পশুর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে শুনানির সময়, যেখানে একজন নাগরিক দোষী সাব্যস্ত হননি। অনেক আইনজ্ঞ আছেন, বিচারপক্ষের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা পর্যালোচনা করে দেখবেন, এটা রাখার দরকার আছে কি নেই? সারা সভ্য দুনিয়ায় যেভাবে হচ্ছে, সেভাবে হবে। আমরা সভ্য দেশের তালিকায় থাকতে পারি।’
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১৫ জুলাই তারিখ ঠিক করেছেন আদালত। অভিযোগ গঠনের সময় ইউনূসসহ অন্যরা নিজেদের নিরপরাধ দাবি করেন। তাঁরা আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান।
গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা এ মামলায় গত ১ ফেব্রুয়ারি ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি ২ জুন শেষ হয়। সেদিন আদালত অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশের জন্য ১২ জুন তারিখ রেখেছিলেন। আজ অভিযোগ গঠনের আদেশ হলো। এর মধ্য দিয়ে এ মামলায় বিচার শুরু হলো।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দায়ের করা এক মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনকে গত ১ জানুয়ারি ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন শ্রম আদালত। সেই সাজার রায় চ্যালেঞ্জ করে ড. ইউনূসসহ চারজনের করা আপিল গত ২৮ জানুয়ারি শুনানির জন্য গ্রহণ করেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল।