শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিতুমীর কলেজের ছাত্রহত্যাসহ আরও চার মামলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি করে হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা দায়েরের তথ্য পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও রাজধানীর বিভিন্ন থানায় এসব মামলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে দুটি হত্যা ও দুটি হত্যাচেষ্টার মামলা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর ১০ দিন পর ১৫ আগস্ট তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয় ঢাকার আদালতে। এর পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে সারা দেশে অন্তত ২৩২টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৯৭টি মামলায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
অধিকাংশ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও তাঁর সরকারের সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনারসহ পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও কয়েকজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর হাতিরঝিলে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মামুন মিয়াকে (২৬) গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে বুধবার মামলাটি করেন মামুনের মা হেনা বেগম। আদালত বাদীর অভিযোগ এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যা সাতটার সময় রাজধানীর হাতিরঝিলের ওয়াপদা রোডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলছিল। তখন পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা মিছিলে গুলি ছোড়ে। তখন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মামুন মিয়া গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে বেটার লাইফ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম রহমত উল্লাহ, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির সিটিটিসির সাবেক প্রধান আাসাদুজ্জামান, সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশীদকে আসামি করা হয়েছে।
উত্তরায় গুলি করে হত্যা
উত্তরায় সাব্বির হোসেন (২২) নামের এক তরুণকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত সোমবার রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় এ মামলা করেন সাব্বির হোসেনের বাবা আমোদ আলী। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৮ জুলাই বিকেলে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন সাত নম্বর সেক্টরের রাজউক মার্কেটের দক্ষিণ পাশে রবীন্দ্রসরণিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল চলছিল। তখন যুবলীগ নেতা তাজুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের অন্য নেতা-কর্মীরা ছাত্র-জনতার মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি চালান। তখন মিছিলে থাকা সাব্বির হোসেনের গলায় গুলি লাগলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।
রামপুরায় গুলিবিদ্ধ হন যুবক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আবু নোমান নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ২০০ থেকে ২৫০ জনকে। গত রোববার রামপুরা থানায় এ মামলা হয়েছে।
মামলায় আবু নোমান দাবি করেছেন, রামপুরার বনশ্রী এলাকায় গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল চলছিল। তখন ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হোসাইনসহ অন্য আসামিরা গুলি করেন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন আবু নোমান। পরে তাঁকে রামপুরার ফরাজী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশীদ ও রামপুরা থানার সাবেক ওসি মসিউর রহমানকে আসামি করা হয়েছে।
আসামি শমী কায়সার, তারানা হালিম ও মমতাজ
দুই বছর আগে বিএনপির কর্মী সৈয়দ হাসান মাহমুদকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঢাকার সিএমএম আদালতে বুধবার এ মামলা হয়। আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, অভিনেত্রী শমী কায়সার, সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম, জাতীয় পার্টির নেতা মশিউর রহমান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে আসামি করা হয়।
মামলার আরজিতে বাদী অভিযোগ করেছেন, এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির নেতা মশিউর রহমান। পরে তিনি বাদী হয়ে ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। পরে আদালত মামলা খারিজ করেন। মামলার পর তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। মামলায় আরও বলা হয়, ২০১৯ সালে তিনি সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ছিলেন। পরে তাঁকে প্রচারণা চালাতে দেওয়া হয়নি। এরপর ২০২২ সালে ২৫ জুন তাঁকে রামপুরা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নির্যাতন করা হয়।