বছরের প্রথম ১০ মাসে ৪৮২ শিশু নিহত

জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ মঙ্গলবার শিশু অধিকারবিষয়ক জোট ‘চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ’ (সিআরএসিবি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিথিরাছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জে গুলিতে নিহত হয় ছয় বছর বয়সী রিয়া গোপ। আর আন্দোলনের সময় নিহত সবচেয়ে কম বয়সী শিশু আবদুল আহাদ (৪)। গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে নিহত হয়েছে মোট ১৮১টি শিশু। এ নিয়ে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে নিহত শিশুর সংখ্যা ৪৮২।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে শিশু অধিকারবিষয়ক জোট ‘চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ’ (সিআরএসিবি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিশুমৃত্যুর এ তথ্য তুলে ধরা হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এ তথ্য সংকলন করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। ১৪টি সংগঠন নিয়ে গঠিত সিআরএসিবি জোটের সচিবালয় হিসেবে সারা বছর দেশের শিশু অধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আসক।

‘শিশু অধিকর রক্ষায় অগ্রগতি: প্রত্যাশা ও প্রতিবন্ধকতা’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ছাত্র আন্দোলনের সময় বল প্রয়োগ করে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালায় তৎকালীন সরকার। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় ১২১ শিশু, যাদের বয়স ১৮ বছর পর্যন্ত। এ নিয়ে এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪৮২ শিশু নিহত হয়েছে, যা আগের বছরে একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে প্রথম ১০ মাসে ৪২১টি শিশু নিহত হয়েছিল। আর গত বছর নির্যাতনের শিকার হয়েছিল ৯২০টি শিশু। এ বছর তা ৩৭ শতাংশ কমে ৫৮০টিতে দাঁড়িয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে গত ১০ মাসে শিশু নির্যাতনের নানা ঘটনা তুলে ধরে বলা হয়, অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ, যৌন হয়রানিসহ শিশুর প্রতি নানা সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বছরের প্রথম ১০ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২১৭টি শিশু। এর মধ্যে ছেলে শিশু ৩২টি। ধর্ষণের শিকার শিশুদের মধ্যে ১৫টি শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ১০ মাসে ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে ৬১টি শিশু। আর শিক্ষকের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ৮৫টি শিশু।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে টেরে ডেস হোমস নেদারল্যান্ডস-বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাহমুদুল কবির বলেন, ‘আমাদের শিশুদের অধিকার আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। শিশুদের কাছ থেকে তাদের সমস্যাগুলো শুনতে হবে। এই জোটের লক্ষ্য হচ্ছে, শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে সুপারিশগুলো নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তুলে ধরা। এ প্রক্রিয়ায় জোট গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে একত্রে কীভাবে কাজ করতে পারে, সে আলোচনা করতে চায়। শিশু অধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে গণমাধ্যমকর্মীদের মতামত শুনতে চায় জোট।’

আসকের সমন্বয়কারী তামান্না হক বলেন, ‘জোট মনে করছে, শিশুরা সবচেয়ে নিগৃহীত। এখন নানামুখী সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। তবে শিশুদের জন্য কী কী প্রয়োজন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে না।’ এ সময় এডুকো বাংলাদেশের শিশু অধিকার ও সুরক্ষাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ শহিদুল ইসলাম শিশুদের জন্য পৃথক শিশু অধিদপ্তর গঠনের দাবি জানান। তিনি শিক্ষকদের মাধ্যমে নির্যাতন বন্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গৃহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য তাদের তথ্যভান্ডার তৈরির সুপারিশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আসকের প্রকল্প কর্মকর্তা শান্তা ইসলাম। তাতে বলা হয়, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ শিশু অধিকার রক্ষায় বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে পদক্ষেপের বাস্তবায়ন না করায় পরিস্থিতির খুব একটা উন্নয়ন হয়নি। দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নানামুখী সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিগত দিনের সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে আশাবাদ জেগেছে। তবে এখন পর্যন্ত শিশুদের নিয়ে খুব বেশি পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। জোট মনে করে জরুরি ভিত্তিতে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে শিশুদের অধিকার উন্নয়নে বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলোকে আরও কার্যকর করা, জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং আরও নতুন ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

আগামীকাল বুধবার ‘সর্বজনীন শিশু দিবস’ পালনের প্রাক্কালে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিশ্বজুড়ে শিশুর অধিকার সুরক্ষায় ১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে শিশু অধিকার কনভেনশন (সিআরসি) গ্রহণ করা হয়। তখন থেকে প্রতিবছর দিনটিকে ‘সর্বজনীন শিশু দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে।