১৪ দিনে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার গ্রেপ্তার
সোমবার দুপুর থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩০৩ জনকে নতুন করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার দুপুর থেকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩০৩ জনকে নতুন করে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সব মিলিয়ে গতকাল পর্যন্ত ১৪ দিনে সারা দেশে মোট ১০ হাজার ৪৩১ জন গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া গেছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই থেকে আন্দোলন শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন ঘিরে ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের পর এটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এর পরদিন থেকে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন জায়গায় এসব ঘটনায় মামলা করে গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা ১৭ জুলাই থেকে দেশের মহানগর, জেলা ও থানা-পুলিশ সূত্র থেকে মামলা ও গ্রেপ্তারের তথ্য সংগ্রহ করছেন। নতুন গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আগে গ্রেপ্তার হওয়া কারও তথ্য নতুন করে পাওয়া গেলে তা হিসাবে যুক্ত করা হচ্ছে।
ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের একটি বড় অংশ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এবং দল দুটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। এ ছাড়া বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও গ্রেপ্তারের ঘটনা আছে। তবে পুলিশ দাবি করছে, যাঁরা নাশকতা-সহিংসতার সঙ্গে জড়িত, শুধু তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীতে গত সোমবার দুপুর ১২টা থেকে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩০ জনকে। এ নিয়ে রাজধানীতে মোট ২ হাজার ৮৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানীতে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ২৬৪টি।
মহানগরের বাইরে ঢাকার ধামরাই, সাভার, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহার থানায় গতকাল পর্যন্ত মামলা হয়েছে ২৩টি। এসব স্থানে গতকাল একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সব মিলে এসব থানার অধীন গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৬৭ জন।
সোমবার দুপুর থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জে আরও ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় সেখানে আরও একটি নতুন মামলা হয়েছে। এ নিয়ে ৩০টি মামলায় নারায়ণগঞ্জে মোট ৫৮৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাজীপুরেও নতুন করে কোনো মামলা হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৪ জনকে। এ নিয়ে গাজীপুরে মোট ৪২টি মামলায় ৪৮৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় নতুন দুই মামলাসহ ৩৩ মামলায় গতকাল আরও ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই বিএনপির নেতা-কর্মী। এ নিয়ে মহানগর ও জেলায় মোট ১ হাজার ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফেনীতে বিএনপির আরও তিন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে ফেনী সদর মডেল থানায় করা ২টি বিস্ফোরক দ্রব্য ও নাশকতার মামলায় মোট ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নোয়াখালীতে পুলিশের অভিযানে শেষ ২৪ ঘণ্টায় বিএনপি ও জামায়াতের আট নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে বিএনপির চারজন ও চারজন জামায়াত-শিবিরের।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে মামলা ও গ্রেপ্তার তুলনামূলক বেশি হচ্ছে রাজশাহী, রংপুর ও বগুড়ায়। রাজশাহী মহানগর ও জেলা মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৭টি মামলা হয়েছে। সেখানে নতুন করে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজশাহীতে এ নিয়ে মোট গ্রেপ্তার ৪০৩ জন। বগুড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ জেলায় ১৫টি মামলায় গতকাল পর্যন্ত ১৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রংপুরে নতুন করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭ জনকে। রংপুর মহানগর ও জেলা মিলিয়ে গতকাল পর্যন্ত ২২টি মামলায় ২৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিলেটে ১১ মামলায় গতকাল পর্যন্ত মোট গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৪৭ জন, এর মধ্যে শেষ ২৪ ঘণ্টায় চারজন।
কোথাও কোথাও কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মামলা না হলেও পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া গেছে। খুলনা বিভাগের কোথাও নতুন কোনো মামলার খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় বাগেরহাটে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫২ জন। যদিও এবারের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি এ জেলায়। যশোরেও পুরোনো মামলায় এ পর্যন্ত মোট গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৩৭ জন। এর মধ্যে গতকাল গ্রেপ্তার হয়েছেন ২২ জন।