তরুণদের পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

বক্তৃতা করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে, ৩ নভেম্বর ২০২৪ছবি: পিআইডি

ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে তরুণদের মনস্থির করার ও স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘আমি বিশেষ করে তরুণদের তাদের মনস্থির করতে, চিন্তা করতে ও স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করি। স্বপ্ন হলো পরিবর্তনের সূচনা। স্বপ্ন দেখলে পরিবর্তন হবে। আপনি যদি স্বপ্ন না দেখেন, তবে এটি কখনোই হবে না।’

আজ রোববার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এনডিসি ও এফডব্লিউসি কোর্সের সদস্যদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ কথাগুলো বলেন।

তরুণদের দিকে ইঙ্গিত করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘নিজেকে প্রশ্ন করুন, আমি বিশ্বের জন্য কী করতে পারি? একবার আপনি কী করতে চান, তা বুঝতে পারলে আপনি তা করতে পারবেন, কারণ আপনার সেই ক্ষমতা রয়েছে।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘বিশ্বের তরুণ প্রজন্ম এখন সমগ্র মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম। তারা যথেষ্ট স্মার্ট হওয়ার কারণে নয়, বরং তাদের হাতে প্রচুর প্রযুক্তি রয়েছে বলে।’

প্রযুক্তিকে আলাদিনের চেরাগ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি যদি ছাত্র বিপ্লবের দিকে তাকান, দেখবেন এটি প্রযুক্তির বিষয়। তারা একে অপরের সঙ্গে খুব দ্রুত যোগাযোগ করতে পারত। তাদের কোনো কমান্ড কাঠামো ছিল না।’

ছাত্রনেতৃত্বাধীন বিপ্লব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দেশের তরুণ-যুবকেরা একটি নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়। তরুণেরা রাজনীতিবিদ নয়। কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টাও তারা করছে না। তবে তারা নিজেদের জন্য একটি নতুন দেশ চায়।’

বিশ্বশান্তির কথা উল্লেখ করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, ‘বেশির ভাগ সময়, মানুষ শান্তির নামে একে অপরকে হত্যা করে।...কিন্তু আমরা প্রতিদিন, আমাদের সমস্ত উচ্চারণ ও আমাদের সমস্ত দর্শনে নিজেদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করি। আমরা শান্তি চাই। দেশের ভেতরে শান্তি, সকল দেশের মধ্যে শান্তি এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার কাছে অত্যন্ত হাস্যকর মনে হয় যে বিশ্বের প্রতিটি সরকারেরই একটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আছে, যা আক্ষরিক অর্থে এটি যুদ্ধ মন্ত্রণালয়। কিন্তু কোনো শান্তি মন্ত্রণালয় নেই।’ তিনি প্রশ্ন করেন, যদি আপনার লক্ষ্য শান্তি হয়, তাহলে আপনার কি শান্তি মন্ত্রণালয় থাকা উচিত নয়?

আক্রমণের বিরুদ্ধে জনগণকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বিশ্বের সরকারগুলোতে শান্তি মন্ত্রণালয় ও যুদ্ধ মন্ত্রণালয় উভয়টি রাখার ওপর জোর দেন। তিনি প্রতিরক্ষা অ্যাটাশেসহ বৈদেশিক সম্পর্কে শান্তি অ্যাটাশে প্রবর্তনের পরামর্শ দেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি (পৃথিবী) একটি আত্মধ্বংসাত্মক গ্রহ। কেননা ‘আমরা শুধুমাত্র নিজেদের হত্যা করার জন্য সবকিছু প্রস্তুত করেছি।’ একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ গ্রহ ধ্বংস করতে পরিবেশ ধ্বংস করছে। আমরা একটি ভুল সভ্যতা তৈরি করেছি—আত্মবিধ্বংসী সভ্যতা।’

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বক্তব্যে এনডিসি ও এএফডব্লিউসি কোর্সের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান এবং তাঁদের সাফল্য কামনা করেন।