প্রধানমন্ত্রীর সফরকে রাজনৈতিক গুরুত্ব দিচ্ছে বেইজিং

বাংলাদেশ ও চীনের পতাকা

ভারত সফর শেষ করার দুই সপ্তাহ পর আগামী ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনে যাচ্ছেন। প্রায় এক দশক পর দ্বিপক্ষীয় এই রাষ্ট্রীয় সফরে অর্থনৈতিক সহযোগিতার পাশাপাশি রাজনীতিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বেইজিং।

প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরের আগে গত শনিবার ঢাকায় এসেছেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লি জিয়ানছাও। আর এ সপ্তাহে চীন সফরের কথা রয়েছে আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের এক প্রতিনিধিদলের।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে সিপিসির উচ্চপর্যায়ের কোনো নেতার এটা প্রথম ঢাকা সফর। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরের আগে লি জিয়ানছাওয়ের ঢাকায় আসাটা তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী দিল্লি সফর শেষ করে ঢাকায় ফেরার পর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন।

চীন যে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং রাজনৈতিকভাবে দুই দেশের সম্পর্ককে নিবিড় করতে চায়, সেটা সিপিসির নেতা লি জিয়ানছাওয়ের কথায় স্পষ্ট। গতকাল সোমবার দুপুরে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে আলোচনার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

দুই দেশের ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে যোগাযোগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে লি জিয়ানছাও বলেন, ‘আলোচনায় দুই দেশের রাজনৈতিক দলের মধ্যে যোগাযোগের প্রেক্ষাপটের বিষয়ে জোর দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। আর চীনে ক্ষমতায় আছে কমিউনিস্ট পার্টি। আমরা বিশ্বাস করি, সরকারের নীতির উৎস রাজনৈতিক দলের নিরিখে হয়ে থাকে। ফলে দুই দেশের রাজনৈতিক দলের মধ্যে যোগাযোগ সরকার ও জনগণের পরস্পরের সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে খুবই সহায়ক। এই যোগাযোগ পরস্পরের জন্য সঠিক নীতি গ্রহণেও ভূমিকা রাখে। এই যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ।’

লি জিয়ানছাও বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বিস্তৃত ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে চীন।

সিপিসি নেতার সঙ্গে আলোচনার পর হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘চীন আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী এবং বড় বাণিজ্য সহযোগী। আমরা বাণিজ্য–ঘাটতি নিয়ে আলোচনা করেছি। ৮ থেকে ১১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সম্ভাবনা বেশি। বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সামনে প্রধানমন্ত্রীর সফরে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে, সেটাই প্রত্যাশা।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চীনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। যেকোনো প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে ব্রিকসে (বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট) যুক্ত করতে চীনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ব্রিকসে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি সদস্যদেশ বা অংশীদার রাষ্ট্র যেভাবেই হোক, সেটা নিয়ে তাদের সমর্থন চাওয়া হয়েছে।

কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারত সফরের দুই সপ্তাহ পর প্রধানমন্ত্রীর সফরটি চীনের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের সংবেদনশীলতা ও স্পর্শকাতরতার বিষয়ে চীন অবগত। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের সঙ্গেও উন্নয়ন অভিযাত্রায় অংশীদার হিসেবে নিবিড়ভাবে যুক্ত থাকতে চায় চীন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ-চায়না সিল্ক রোড ফোরামের চেয়ারম্যান ও ১৪–দলীয় জোটের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন বেইজিং সফরটি নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরিমণ্ডলের নানা ঘটনাপ্রবাহের কারণে ভূরাজনৈতিকভাবে এই দ্বিপক্ষীয় সফরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ফলে সামগ্রিকভাবে ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে অর্থনীতি ও উন্নয়নের পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সম্পর্ক গভীরতর করার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, চীন দেখছে, টানা চারবার ক্ষমতায় থাকার মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি ক্ষমতাসীন দল রাজনৈতিক দিক থেকে একটি স্থিতিশীলতা তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে দেশটি বাংলাদেশের সঙ্গে বৃহত্তর রাজনৈতিক সহযোগিতায় মনোযোগ দিচ্ছে।

জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিপিসির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রীর ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট যে রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে তাদের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। কারণ, সিপিসির চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটে সরকারের নীতি কৌশলে। ফলে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে যেভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়, সেভাবে এগিয়ে যেতে আমরা তৈরি কি না, সেটা নিজেদের প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করছে।’