চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ফাটল দেখতে পেয়েছে সংসদীয় উপকমিটি

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ত্রুটি পর্যবেক্ষণ করছেন সংসদীয় উপকমিটি। আজ দুপুরে এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট প্রান্তেপ্রথম আলো

চট্টগ্রাম নগরের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলারে ফাটল দেখেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির গঠন করা উপকমিটি। ফাটলের বিষয়ে আরও বিশদভাবে যাচাইয়ের জন্য বিশেষজ্ঞদের মতামত নেবে কমিটি। আর অনিয়ম ও ত্রুটিপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন উপকমিটির সভাপতি এম এ লতিফ। তিনি বলেন, নগরের লালখান বাজার অংশের পিলারে ফাটল দেখা গিয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের গুণগত মান যাচাই এবং অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করতে তিন সদস্যের উপকমিটি গঠন করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।
উপকমিটির সদস্যরা তিন দিনের সফরে আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে আসেন। দুপুরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার অংশ পর্যন্ত ঘুরে দেখেন তাঁরা। এ সময় এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন অংশের কাজ তদারক করেন।

এরপর লালখান বাজার প্রান্তে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কমিটির সভাপতি এম এ লতিফ। এ সময় তাঁর সঙ্গে উপকমিটির অন্য দুই সদস্য সংসদ সদস্য মো. মজিবুর রহমান ও পারভীন জামান উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), ঠিকাদারি ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও ছিলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলারে যেসব ক্র্যাকের (ফাটল) কথা বলা হয়েছে, তা আমরা স্বচক্ষে দেখেছি। আপনারাও (গণমাধ্যমকর্মী) দেখেছেন। এটি টেকনিক্যাল (কারিগরি) বিষয়। আমরা বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করব। তাঁদের মতামত নেব।’

লালখানবাজার প্রান্তে এক্সপ্রেসওয়ের ফাটল দেখছেন সংসদীয় উপকমিটির সদস্যরা। আজ দুপুরে
প্রথম আলো

গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি চট্টগ্রাম নগরের ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে’–এর উদ্বোধন করেছিলেন। ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়েতে ১৫টি র‍্যাম্প রয়েছে। মূল অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনো র‍্যাম্পগুলোর কাজ সম্পন্ন হয়নি। আর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের সাড়ে সাত মাস পার হলেও গাড়ি চলাচল শুরু হয়নি।

তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের প্রথমে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

বৃহস্পতিবার পরিদর্শনের সময়ে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজে অসংগতি দেখেছেন উল্লেখ করে সাংবাদিকদের চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়ের ফিনিশিং কাজের (শেষ পর্যায়ের কাজ) ত্রুটিগুলো আমাদের চোখে পড়েছে। যানবাহন চালুর আগে নাট-বল্টুতে মরীচিকা ধরেছে। আবার এক্সপানশন জয়েন্ট (এক্সপ্রেসওয়েতে সড়কের সমান্তরালে কংক্রিটের সংযোগস্থলগুলো মোড়ানো হয় ইস্পাতের পাত দিয়ে। একে এক্সপানশন জয়েন্ট বলা হচ্ছে) পার হওয়ার সময় একটা বড় ঝাঁকুনি দেয়। অন্যান্য এক্সপ্রেসওয়েতে এই ঝাঁকুনি দেয় না।’

উপকমিটির প্রধান এম এ লতিফ বলেন, ‘আমরা পতেঙ্গা অংশ থেকে বিভিন্ন পয়েন্ট দেখেছি। এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে দুই পাশের সীমানাদেয়ালে যে ক্ল্যাম্প লাগানো হয়েছে, সেগুলো মানসম্মত নয়। ফিনিশিংয়ে কিছু সমস্যা আছে। দু-এক জায়গায় রডও বেরিয়ে আছে। এসব অসংগতি প্রকল্প পরিচালক ও কনসালট্যান্টকে দেখিয়েছি। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে জিজ্ঞেস করেছি, “আপনারা কী দেখছেন? কী করছেন? পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ কী?”’

এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা প্রান্তে টোলপ্লাজার নির্মাণ কাজ চলছে। আজ দুপুরে তোলা
প্রথম আলো

এক্সপ্রেসওয়েতে কোনো ধরনের অবকাঠামোগত ত্রুটি আছে কি না এবং থাকলে কারও গাফিলতি আছে কি না, তা উপকমিটি দেখবে বলে জানিয়েছেন সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। তিনি বলেন, নির্মাণকাজ–সংক্রান্ত প্রতিটি বিষয় তাঁরা যাচাই করবেন।

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও সময় নেবেন। বিশেষজ্ঞদের মতামত নেবেন। এরপর প্রতিবেদন সবার সামনে তুলে ধরবেন। নির্মাণকাজে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানাসহ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও চীনের র‍্যাঙ্কিন।

পরিদর্শক দলের সঙ্গে থাকা সিডিএর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এখানে যা আছে, তা ফাটল নয়, এয়ার ক্র্যাক। এ ধরনের স্ট্রাকচারে এ রকম ক্র্যাক (ফাটল) থাকে। তারপরও ১২ টন ওজনের গাড়ি তুলে যাচাই করা হয়েছে, কোনো ফাটল নেই। ফিনিশিংয়ে কিছু ছোটখাটো বিষয় আছে। সেগুলো আমরা কনসালট্যান্ট ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বলেছি। এগুলো অল্প সময়ে সংশোধনযোগ্য।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মনির হোসেন বলেন, ‘ওয়েট লিফটিং করে আমরা যাচাই করেছি, এগুলো ফাটল নয়। আর যেসব অসংগতির কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো মেজর কিছু নয়। অল্প সময়ে ঠিক করা যাবে।’