সরকারি প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ সামনে রেখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও তাঁর ছেলে–মেয়ের জমি কিনে নেওয়ার খবর নিয়ে আলোচনার মধ্যে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহাম্মদ আবদুল লতিফকে বদলি করা হয়েছে। আজ সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাঁকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) বদলি করার কথা জানানো হয়েছে। তাঁর জায়গায় মানিকগঞ্জে নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবকে।
মানিকগঞ্জে সরকারি একটি ওষুধ কারখানা নির্মাণ প্রকল্প পাসের আগেই প্রস্তাবিত এলাকায় ২০ একর ৬৫ শতাংশ জমি কিনে নেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও তাঁর ছেলে–মেয়েরা। এরপর সেই জমির শ্রেণি পরিবর্তন (ভিটি শ্রেণি) করে নির্দিষ্ট মৌজার জমির সরকারি মূল্য পাঁচ গুণ বাড়ানো হয়। পরবর্তী সময়ে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার শুরুতে জেলা ভূমি ব্যবস্থাপনা কমিটি মূল্যায়নে বিষয়টি উঠে আসে। কমিটির সভাপতি ছিলেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানান, প্রস্তাবিত ওই মৌজায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা বেশি খরচ হবে।
এই চিঠি দেওয়ার পরপর বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনে নামেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ফুফাতো ভাই মো. ইসরাফিল হোসেন, যিনি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
এই বিষয়ে ৮ জুলাই প্রথম আলোতে ‘সরকারি প্রকল্পে অধিগ্রহণের আগেই জমি কিনে নেন মন্ত্রী ও তাঁর ছেলে–মেয়ে’ শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই খবর প্রকাশের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। তাতে জেলা প্রশাসককে বিষোদ্গার করা হয়। জেলা প্রশাসকের কারণে সরকারি ওষুধ কারখানা প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে জেলা প্রশাসক বলেছিলেন, প্রস্তাবিত জমিতে কারখানা না করে পাশের কোনো মৌজায় প্রকল্প করলে সরকারের ১০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
ওষুধ কারখানা নির্মাণের জমি ঘিরে এই কারসাজির ঘটনা নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতেই মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসককে সরিয়ে দেওয়া হলো।
আজ নতুন করে মোট আটজনকে জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মো. শামীম হাসানকে মেহেরপুরে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক আবদুল্লাহ আল খায়রুমকে শেরপুরে, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপসচিব ইমরান আহমেদকে জামালপুরে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মো. আবুজাফর রিপনকে মুন্সিগঞ্জে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসানকে রংপুরে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রেহেনা আকতারকে মানিকগঞ্জে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) মো. মাহমুদুল হককে নারায়ণগঞ্জে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কিসিঞ্জার চাকমাকে চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে ৪ দিনের ব্যবধানে ২৮টি জেলায় মাঠ প্রশাসনের অন্যতম এই গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন আনল সরকার। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ১০ জন এবং গতকাল রোববার আরও ১০টি জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসব কর্মকর্তা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। সে জন্য নতুন ডিসি নিয়োগকে গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।