দেশে স্মার্টফোনের উৎপাদন-বিক্রি কমছে

স্মার্টফোনফাইল ছবি: রয়টার্স
স্মার্টফোন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলে ‘মোবাইল কর্নার’ নামের একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী অন্তর। এখন বেচাকেনা কেমন চলছে, জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষ খাবে না ফোন কিনবে? আগে দিনে যেখানে ১৫টির বেশি ফোন বিক্রি হতো, এখন সেখানে ৫টি ফোনও বিক্রি হয় না।’

বিক্রয়কর্মী অন্তর জানালেন, মোবাইল কর্নারে আগে দিনে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মতো ফোন বিক্রি হতো। কিন্তু এখন তা ২০ থেকে ৩০ হাজারে নেমে গেছে।

শপিং মলটিতে থাকা মুঠোফোন বিক্রির অন্য দোকানের কর্মীরা বলেন, চলমান অর্থনৈতিক সংকটে মানুষকে অনেক কিছুর সঙ্গে আপস করে চলতে হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনের তালিকায়ও চলছে কাটছাঁট। এ কারণে গত ৩ থেকে ৪ মাস ধরে মুঠোফোন বিক্রির পরিস্থিতি বেশি খারাপ।

এদিকে দেশে স্মার্টফোনের উৎপাদনও কমেছে। পাশাপাশি কমেছে মুঠোফোন ও ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবে, দেশে স্মার্টফোনের উৎপাদন টানা তিন মাস ধরে কমছে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশে স্মার্টফোনের উৎপাদন ছিল ৩৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। উৎপাদনের এই হার বেড়ে সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ২৪ শতাংশ হয় গত মার্চ মাসে। তারপর কোনো মাসে উৎপাদন কিছু কমেছে, কিছু বেড়েছে।

তবে গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্মার্টফোনের উৎপাদন টানা কমতির দিকে। গত নয় মাসে সবচেয়ে কম স্মার্টফোন উৎপাদন হয় সেপ্টেম্বর মাসে, ২৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

দেশে স্মার্টফোনের উৎপাদন কমলেও বেড়েছে ফিচার ফোনের উৎপাদন। গত জানুয়ারিতে ফিচার ফোনের উৎপাদন ছিল ৬৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বাড়তে বাড়তে তা এখন ৭৩ দশমিক ৬২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

মুঠোফোন বিক্রেতারা বলছেন, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। তবে শুধু কথা বলার জন্য অনেকে স্মার্টফোনের পাশাপাশি একটি ফিচার ফোনও রাখে। কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আগে যে একটি স্মার্টফোনের কথা ভাবত, সে এখন ফিচার ফোন কিনেই প্রয়োজন মেটাচ্ছে।

আরও পড়ুন

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দেশে এখন ১৪টি প্রতিষ্ঠান মুঠোফোন উৎপাদন করছে। দেশে বছরে স্মার্টফোনের চাহিদা ১ কোটির মতো। এর অধিকাংশই মেটায় দেশে উৎপাদিত মুঠোফোন।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ট্রানশান বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও রিজওয়ানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, স্মার্টফোনের বিক্রি ২০ শতাংশ কমেছে। বছরের চতুর্থ ভাগে ফোন বিক্রি এমনিতেই কম থাকে, তবে এবার যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে, এতটা কম হয় না। আগে ১৫ হাজারের বেশি দামের স্মার্টফোনের চাহিদা বেশি ছিল। এখন তা ১০ থেকে ১৫ হাজারে নেমেছে।

এই পরিস্থিতির কারণ সম্পর্কে রিজওয়ানুল হক বলেন, এখন সবাই কম-বেশি আর্থিক কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ডলারের দাম বাড়ায় কাঁচামাল আমদানির খরচ বেড়েছে। ফলে মুঠোফোনের দামও বেড়েছে। সরকার এ বছর বাজেটে ব্যবসায়িক পর্যায়ে মুঠোফোনে দেওয়া ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা প্রত্যাহার করেছে। এর প্রভাবও বাজারে আছে। ফলে উৎপাদকেরা বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করেই উৎপাদনের কথা ভাবছেন।

দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যাও কমেছে। বিটিআরসির হিসাবে, গত জুলাইয়ে ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল ১২৭ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন। যা পরের মাসে কিছুটা কমে হয় ১২৭ দশমিক ২৬ মিলিয়ন। গত জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহক ১১ দশমিক ১৪ মিলিয়নই আছে। অন্যদিকে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক কিছুটা কমেছে। জুলাই মাসে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল ১১৬ দশমিক ৪১ মিলিয়ন। আগস্ট মাসে, তা কমে হয়েছে ১১৬ দশমিক ১২ মিলিয়ন।

টানা তিন মাস ব্রডব্যান্ড গ্রাহকসংখ্যা একই থাকার কারণ হিসেবে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ব্রডব্যান্ড সংযোগের জন্য কেব্‌লসহ অনেক কিছুই বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। এর খরচ বেড়েছে। একসময় ইন্টারনেট সংযোগ নামমাত্র মূল্যে বা বিনা মূল্যেই দেওয়া হতো। কিন্তু এখন তা দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে নতুন গ্রাহক আসছে না।

আরও পড়ুন

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, যেসব গ্রাহক আগে দেড় হাজার টাকার প্যাকেজ নিয়েছেন, তারা এখন ১ হাজার টাকারে প্যাকেজে যাচ্ছেন। নতুন চাহিদা আগের মতো আসছে না। কিছু করপোরেট গ্রাহক শেয়ারড ব্যান্ডউইথ নিয়ে খরচ কমাচ্ছে। সব মিলিয়ে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব ইন্টারনেট সেবায়ও পড়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেশে মুঠোফোন গ্রাহক ছিল ১৮০ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন, যা গত জুলাই পর্যন্ত বেড়ে হয় ১৮৪ দশমিক শূন্য ৫ মিলিয়ন। তবে তা আগস্টে কমে হয় ১৮৩ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন।

দেশে এখন চারটি মোবাইল অপারেটর আছে। এগুলোর মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি। গত জুনের শেষ দিকে গ্রামীণফোনের সিম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় বিটিআরসি। গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিটিআরসি জানায়, গ্রামীণফোন অব্যবহৃত সিম বিক্রি করতে পারবে, নতুন সিম নয়। বিটিআরসির হিসাবমতে, নিষেধাজ্ঞার পর গ্রামীণফোনের ৩৪ লাখ গ্রাহক কমেছে। এর প্রভাব স্বভাবত পড়েছে মোট মুঠোফোন গ্রাহকের ওপর।