প্রাণ ফিরেছে বান্দরবানের পর্যটনে
পর্যটকে মুখর হয়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার পর্যটন স্পটগুলো। আজ শুক্রবার জেলা শহরসহ চার উপজেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। এতে নিষেধাজ্ঞাসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্প্রাণ থাকা বান্দরবান জেলার পর্যটন খাত যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। দীর্ঘদিন পর পর্যটক সমাগম বাড়ায় পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বেশ খুশি। জেলার রোয়াংছড়ির দেবতাখুম ও থানচির রেমাক্রি ও নাফাখুম যেতে বিধিনিষেধ তুলে নিলে পর্যটক আরও বাড়বে বলে আশাবাদী পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা।
আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিন জেলা শহরের নীলাচল, মেঘলা ও শহরতলির শৈলপ্রপাতে ঘুরে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের ভিড় দেখা গেছে। সালমান শাহ নামের ঢাকার গাজীপুর থেকে আসা এক পর্যটক বলেন, তাঁরা ৪০ জনের একটি দল ট্যুর অপারেটরদের একটি প্যাকেজের অধীনে বান্দরবান ও কক্সবাজারে ভ্রমণে এসেছেন। সারা দিন বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের শৈলপ্রপাত, চিম্বুক চূড়া ও নীলগিরির বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীবনধারা দেখে বিকেলে কক্সবাজারে চলে যাবেন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা মোবারক হোসেন বলেন, চারটি চাঁদের গাড়ি নিয়ে তাঁরা পাহাড় দেখতে বের হয়েছেন। প্রথম দিনে জেলা শহরের আশপাশের স্বর্ণমন্দির, মেঘলা ঘুরে নীলাচলে সূর্যাস্ত দেখার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। কিশোরগঞ্জ থেকে আসা আজহার উদ্দিন বলেন, তাঁদের ইচ্ছা ছিল থানচির নাফাখুম ও রেমাক্রি ঝরনায় যাওয়ার। সেখানে যাওয়ার অনুমতি পেলে খুবই ভালো লাগত। তারপরও পাহাড় ও পাহাড়ি মানুষের জীবন দেখে খুবই ভালো লাগছে।
শৈলপ্রপাতের ফল বিক্রেতা সিয়ামপুই বম বলেন, দীর্ঘদিন পর্যটক না থাকায় তাঁরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন পর্যটক বাড়ায় বিক্রিও বেড়েছে। কোমর তাঁতের তৈরি পণ্যের বিক্রেতা জুলি বমও একই কথা জানান। তিনি বলেন, পর্যটক আসার এই ধারা অব্যাহত থাকলে এত দিন যে ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।
জেলা শহরের বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে কথা হয় পর্যটক পরিবহনের জিপ (চাঁদের গাড়ি), কার ও মাইক্রোবাসের লাইনম্যান ফখরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, পর্যটক পরিবহনে দুপুর পর্যন্ত আড়াই শতাধিক গাড়ি ভাড়া হয়েছে। তাঁদের লাইনে ৩৫০টি চাঁদের গাড়ি, জিপ ও মাইক্রোবাস রয়েছে। গাড়ি নিয়ে অধিকাংশ পর্যটক নীলগিরি, চিম্বুক চূড়ার উদ্দেশে সকালে রওনা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
শ্যামলী পরিবহনের লাইনম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিটি বাস পর্যটকে ভরপুর। যাত্রী বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত বাস দিতে হয়েছে। অথচ এত দিন যাত্রী–সংকটে অনেক পরিবহন কোম্পানিকে বান্দরবানে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
গত ৮ অক্টোবর বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। প্রায় এক মাস পর গত ৬ নভেম্বর রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি ছাড়া জেলার চারটি উপজেলায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরও এত দিন তেমন পর্যটকের দেখা পায়নি বান্দরবান। আজ শুক্রবার থেকে পর্যটক বেড়েছে।
জেলা শহরের তং রিসোর্টের পরিচালক আল-ফয়সাল বিকাশ ও হলিডে ইনের ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন জানান, দূরে যেতে না পারায় বেশির ভাগ পর্যটক শহরতলির রিসোর্টগুলোতে রাতযাপন করছেন। তাঁদের রিসোর্টগুলোতে বিজয় দিবসের আগে পর্যন্ত কোনো কক্ষ খালি নেই। জেলা শহরের হিলভিউ হোটেলের ব্যবস্থাপক মো. পারভেজ বলেন, তাঁদের ৮০ শতাংশ কক্ষ ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বুকিং রয়েছে।
জেলা হোটেল-মোটেল, অবকাশযাপনকেন্দ্র মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পর্যটকের আগমন বেড়েছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা শেষ হলে পর্যটক আরও বাড়বে। তিনি বলেন, জেলা শহর ও শহরতলিতে ছোট-বড় ৭০টি হোটেল-মোটেল ও অবকাশযাপনকেন্দ্রে একসঙ্গে সাড়ে পাঁচ হাজার পর্যটকের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। আজ শুক্রবারে এখনো ধারণক্ষমতার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কক্ষ খালি রয়েছে। রোয়াংছড়ির দেবতাখুম ও থানচির রেমাক্রি ও নাফাখুম খুলে দেওয়া হলে পর্যটক আরও বাড়বে। প্রশাসন বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে।