১৮ বছরেও ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ
ফুলবাড়ী দিবসে আজ সোমবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ওই আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও সমাবেশ করেছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। এ সময় বক্তারা বলেন, জনতার লড়াইয়ের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ আগস্ট আন্দোলনকারীদের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিল তৎকালীন সরকার। কিন্তু ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন এখনো হয়নি।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন ও অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকর প্রকল্প বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি-নির্ভর প্রকল্প গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন কমিটির নেতারা।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চুক্তি অনুযায়ী এশিয়া এনার্জিকে বহিষ্কার করার কথা ছিল। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা নিষিদ্ধ করার কথা ছিল। কিন্তু নানাভাবে এশিয়া এনার্জি বাংলাদেশের কাজ চলমান। এ ছাড়া বিভিন্নভাবে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার প্রক্রিয়াও অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া জনমত উপেক্ষা করে সুন্দরবনের উপকূলীয় অঞ্চলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলা হলো।
সমাবেশে বক্তারা ৬ দফা ফুলবাড়ী চুক্তি বাস্তবায়ন করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানান। তাঁরা বলেন, উন্মুক্ত কয়লাখনি বন্ধ করে ফুলবাড়ী রক্ষা আন্দোলনের নেতাদের নামে করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। পাশাপাশি এশিয়া এনার্জিকে (জিসিএম) দেশ থেকে বহিষ্কারেরও দাবি জানানো হয়।
উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লাখনি বাস্তবায়নের প্রতিবাদে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বহুজাতিক কোম্পানি এশিয়া এনার্জির অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে আল আমিন, সালেকিন ও তরিকুল নামে তিনজন প্রাণ হারান। আহত হন কয়েক শ মানুষ। পরে ফুলবাড়ীবাসীর গণ-আন্দোলনের মুখে ছয় দফা চুক্তি করতে বাধ্য হয় তৎকালীন সরকার। এর পর থেকে সরকারের করা ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করছেন ফুলবাড়ীবাসী ও জাতীয় কমিটি।
সমাবেশে জাতীয় কমিটির অন্যতম নেতা অধ্যাপক আনু মোহাম্মাদ, অধ্যাপক এম এ আকাশ ও রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বক্তব্য দেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সাইফুল হক, আবদুস সাত্তার, নাজমুল হক প্রধান, বেলাল চৌধুরী, জুলফিকার আলী, মাসুদ রানা, মনিরুদ্দীন পাপ্পু, নাসির উদ্দিন, মাসুদ খান, মাইনুদ্দিন চৌধুরী, শুভ কিবরিয়া, খান আসাদুজ্জামান, জাকির হোসেন, আলমগীর কবির প্রমুখ।
সভার শুরুতে ফুলবাড়ীর বীর শহীদ ও জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রয়াত প্রকৌশলী শেখ মো. শহিদুল্লাহর স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
ফুলবাড়ীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাসদ (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ জাসদ, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি, জাতীয় কমিটি, ঢাকা মহানগর বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, বাপা, গ্রিন ভয়েজসহ বিভিন্ন ছাত্র-যুব ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।