সোহরাওয়ার্দীর ২৬ শর্তেই গোলাপবাগে বিএনপিকে অনুমতি

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন হারুন অর রশীদ
ছবি: তানভীর আহম্মেদ

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশের ক্ষেত্রে যে শর্তগুলো দেওয়া হয়েছিল, একই শর্তে আগামীকাল রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের কাছে গোলাপবাগ মাঠে দলটিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে ঢাকার মিন্টু রোডে ডিবি কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

হারুন অর রশীদ বলেন, সমাবেশের জন্য কমলাপুর স্টেডিয়ামে অনুমতি চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু আজ তারা গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের জন্য অনুমতি চায়। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সমাবেশ ঘিরে কোনো নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে কি না এবং কী ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘বিএনপি যেখানে অনুমতি চেয়েছিল, সেখানেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ঘিরে যে ধরনের নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা হয়েছিল, একই ব্যবস্থা গোলাপবাগ মাঠকে কেন্দ্র করেও রাখা হবে। পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’

গ্রেপ্তার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসের রিমান্ড চাইবেন কি না এবং জামিন শুনানিতে বিরোধিতা করবেন কি না, জানতে চাইলে হারুন বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে রিমান্ড চাওয়া হয়নি। জামিনেরও বিরোধিতা করা হবে না।

আরও পড়ুন

গত বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা ও উসকানি দেওয়ার অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার পল্টন থানায় করা মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

আরও পড়ুন

মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে পুলিশ আটক করেছে বলে দলের এক নেতা জানান। বিএনপির প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান গতকাল বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা দলের শীর্ষস্থানীয় এই দুই নেতাকে তাঁদের বাসা থেকে আটক করে নিয়ে গেছেন।

আরও পড়ুন

যেসব শর্তে অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো

ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের পক্ষে আজ তাঁর বিশেষ সহকারী (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. তানভীর সালেহীনের স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে অনুমতি দেওয়া হয়। সেখানে ২৬টি শর্ত দেওয়া হয়। শর্তগুলো হলো—

১. এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।

২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রে উল্লেখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

৩. গোলাপবাগ মাঠের অভ্যন্তরে সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

৪. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্তসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।

৫. স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের অভ্যন্তরে ও বাইরে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।

৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি প্রবেশগেটে আর্চওয়ে স্থাপন করতে হবে এবং সমাবেশস্থলে আগতদের হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

৭. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় Vehicle Scanner/Search Mirror–এর মাধ্যমে সমাবেশস্থলে আসা সব যানবাহন তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা রাখতে হবে।

৯. গোলাপবাগ মাঠের বাইরে বা সড়কের পাশে মাইক/সাউন্ডবক্স ব্যবহার করা যাবে না।

১০. গোলাপবাগ মাঠের বাইরে বা সড়কের পাশে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না।

১১. গোলাপবাগ মাঠের বাইরে, রাস্তায় বা ফুটপাতে কোথাও লোক সমাবেত হওয়া যাবে না।

১২. আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।

১৩. ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে, এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।

১৪. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে।

১৫. সমাবেশ শুরুর ২ (দুই) ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে।

১৬. সমাবেশস্থলের আশপাশসহ রাস্তায় কোনো অবস্থাতেই সমবেত হওয়াসহ যান ও জন চলাচলে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।

১৭. পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে কোনো ধরনের লাঠিসোঁটা, রড ব্যবহার করা যাবে না।

১৮. আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।

১৯. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ ও বক্তব্য প্রদান করা যাবে না।

২০. উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।

২১. মিছিলসহকারে সমাবেশস্থলে আসা যাবে না।

২২. পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং করতে হবে, মূল সড়কে কোনো গাড়ি পার্কিং করা যাবে না।

২৩. সমাবেশস্থলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।

২৪. স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করে সমাবেশ পরিচালনা করতে হবে।

২৫. উল্লিখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।

২৬. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।