রোজিনা ইসলামের মামলায় অধিকতর তদন্তের প্রতিবেদন আজকেও জমা পড়েনি
দণ্ডবিধি ও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলায় অধিকতর তদন্তের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য ছিল আজ বৃহস্পতিবার। তবে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এদিন কোনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি। আগামী ২১ মে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নতুন তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো তারিখ পেছাল।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূর এ আদেশ দেন। মামলায় আজও হাজিরা দেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম।
এর আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় অধিকতর তদন্তের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। সেদিন রোজিনা ইসলাম তাঁর জব্দ করা পাসপোর্ট নিজের জিম্মায় চেয়ে লিখিত আবেদন করেছিলেন। আজ সেই আবেদনের ওপর শুনানির কথা থাকলেও তা হয়নি। আগামী ধার্য তারিখে (২১ মে) এ বিষয়ে শুনানির দিন রেখেছেন আদালত। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন তাঁর আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার।
এ মামলায় রোজিনা ইসলামের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন এহসানুল হক সমাজী।
২০২১ সালের ১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কক্ষে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা ও নির্যাতন করা হয়। পরে শাহবাগ থানা–পুলিশের কাছে তাঁকে হস্তান্তর করা হয়। রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে ১৯২৩ সালের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডবিধির দুটি ধারায় মামলা করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী। মামলাটি তদন্ত করে গত বছরের ৩ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে পুলিশ বলেছিল, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সপক্ষে কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি। এ কারণে তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে চেয়েছিল তদন্ত সংস্থাটি।
এর প্রায় সাত মাস পর গত ২৩ জানুয়ারি চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা শিব্বির আহমেদ ওসমানী। তাঁর আবেদন গ্রহণ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন ঢাকার সিএমএম আদালত।
রোজিনা ইসলামকে হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য–বিবৃতি দিয়ে আসছে দেশি–বিদেশি মানবাধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন। এমন ২১টি সংগঠন সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে একটি চিঠি (ই-মেইল) পাঠিয়েছে। যার অনুলিপি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, রোজিনা ইসলাম সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে যে কাজ করেছেন, এর জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২২ সালের ‘অ্যান্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। তাঁর কাজ জনস্বার্থমূলক—এটা অপরাধ নয়। সে কারণে তাঁকে জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইনের আওতায় সুরক্ষা দেওয়া উচিত।