বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের ত্রিপুরা ও ম্রোদের ৪০০ একর জমি জবরদখলের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বলে অভিযোগ উঠেছে।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেছে লামা সরাই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি।
কমিটির অভিযোগ, সরই ইউনিয়নের লাংকমপাড়া, জয়চন্দ্রপাড়া ও রেংয়েনপাড়ার ৪০০ একর ভূমি জবরদখল করতে গিয়ে সেখানকার অশোক বৌদ্ধবিহারে হামলা, ভাঙচুর ও বুদ্ধমূর্তি লুট, জুমভূমি পুড়িয়ে দেওয়া এবং ভূমি রক্ষা কমিটির নেতা–কর্মী ও গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে কোম্পানিটি। ভূমি রক্ষায় বারবার প্রশাসনের কাছে গেলেও কোনো সুরাহা মিলছে না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রংধজন ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ‘আমাদের ৪০০ একর জুমভূমি জবরদখলের চেষ্টা এখনো বন্ধ হয়নি। এই জমি হাতছাড়া হয়ে গেলে আমাদের বাঁচার আর কোনো উপায় থাকবে না।’
জবরদখলের চেষ্টার ঘটনা ব্যাখ্যা করে রংধজন ত্রিপুরা বলেন, ‘এই ৪০০ একর জমির পশ্চিম পাশে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের রবারবাগান। তারা এখন আমাদের এই জমি জবরদখল করতে চায়। এ জন্য ২০১৭ সাল থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে চলতি বছরের ৯ এপ্রিল লামা রাবার কোম্পানির চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রকল্প পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জহিরুল ইসলামসহ ২০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা ভাড়া করে এই জমি জবরদখলের চেষ্টা করে। এ সময় এই জমিতে থাকা সব গাছ কেটে ফেলে। এরপর ২৬ এপ্রিল তারা ওই জমির বাগানে আগুন দিয়ে প্রাকৃতির পরিবেশসহ লাখ লাখ টাকার সম্পত্তির ক্ষতি করে। ফলে আমরা তিন পাড়াবাসী একদিকে যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকি, অন্যদিকে চরম খাদ্যসংকটে পড়ে যাই। এই আগুনে জুমভূমি পোড়া ছাড়াও বহু জীবের প্রাণ সংহার হয় এবং ছড়া ও ঝরনার পানি বিষাক্ত হয়। এ কারণে বর্তমানে আমাদের এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি পাওয়া অত্যন্ত দুষ্কর হয়ে পড়েছে।’
এসব জঘন্য অপরাধে যাদের বিচার হওয়া উচিত, সরকার ও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে তাদের পক্ষাবলম্বন করে চলেছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন রংধজন ত্রিপুরা।
এ জমি জবরদখলের চেষ্টা অব্যাহত আছে উল্লেখ করে লামা সরাই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে। সেগুলো হলো লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের ভূমি জবরদখল বন্ধ করতে হবে এবং ম্রো ও ত্রিপুরাদের ভোগদখলীয় ৪০০ একর জুমভূমিসহ কোম্পানিটি যেসব জমি জবরদখল করেছে, তা ফেরত দিতে হবে। এই কোম্পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ম্রো ও ত্রিপুরাদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। জুমভূমি কেটে ও আগুনে পুড়িয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা, অশোক বৌদ্ধবিহারে হামলা, ভাঙচুর ও বুদ্ধমূর্তি লুট এবং ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রংধজন ত্রিপুরার ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দিতে হবে। কোম্পানির করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আর বান্দরবানে রবার ও অন্যান্য বাগান সৃজন কিংবা পর্যটন উন্নয়নের উদ্দেশ্যে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে দেওয়া সব জমির লিজ বাতিল করতে হবে।
লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের বক্তব্য: সংবাদ সম্মেলনে তোলা অভিযোগের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পাওয়া জমিতে বাগান করছে। ১৯৯০ সাল থেকে ওই এলাকায় আছি। আমরা মোট ৬৪ জন ব্যক্তি ২৫ একর করে মোট ১ হাজার ৬০০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছি। যে ৪০০ একর জমির কথা বলা হচ্ছে, তা আমাদেরই।’
২৬ এপ্রিল ৪০০ একরের বাগান পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ প্রসঙ্গে কামাল উদ্দিন বলেন, ‘৪০০ একর জমি কেটে আমরা রবার চাষের জন্য প্রস্তুত করেছিলাম। এ সময় কে বা কারা এসে তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে বান্দরবানের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দেওয়া প্রতিবেদনেও দেখা গেছে, সেখানে কোনো বড় গাছ বা কারও বাড়িঘর পুড়ে যায়নি। স্থানীয় পাহাড়িদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ অমূলক।’