আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বেশ বেড়ে গেছে। রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে গত বুধবার থেকে তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে পুলিশ। এসব জায়গায় পুলিশ সাধারণ মানুষকে তল্লাশির নামে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ এসেছে। এ সময় কারও কারও মুঠোফোন পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। এতে কী ধরনের ছবি ও বার্তা আছে—পুলিশকে সেগুলো যাচাই করতে দেখা গেছে। এভাবে বাছবিচারহীন তল্লাশি ও মুঠোফোন পরীক্ষা আইনসংগত কি না, এখন সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে।
গত বুধবার দুপুরে টঙ্গী সেতু হয়ে ছেলে মো. অনিককে (১৫) নিয়ে মোটরসাইকেলে করে রাজধানীর মিরপুরে যাচ্ছিলেন মো. পলাশ। সেতুর সামনে আসতেই তাঁদের থামায় পুলিশ। প্রথমে দুজনের দেহ তল্লাশি করা হয়। পরে ব্যাগ তল্লাশি ও মুঠোফোনের ছবি ও বার্তা যাচাই করে দেখা হয়।
একপর্যায়ে তাঁদের আটক করলে কাকুতিমিনতি করে ছাড়া পান তাঁরা। পলাশ বলেন, ‘আমি সাধারণ শ্রমিক। কোনো দলের রাজনীতি করি না। তারপরও পুলিশ আমাদের এভাবে হয়রানি করল।’ (প্রথম আলো অনলাইন, ৭ ডিসেম্বর)।
পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য এ ধরনের তল্লাশিকে নিয়মিত কাজের অংশ বলে দাবি করা হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, পুলিশ তল্লাশি চালাতেই পারে। তবে তাদের কিছু শর্ত মেনে চলতে হয়। গত বুধবার তারা যেভাবে তল্লাশি চালিয়েছে, তাতে এসব শর্ত মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলাফেরার অধিকার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। পুলিশ তল্লাশির নামে এই অধিকার ক্ষুণ্ন করতে পারে না। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে কোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশি করতে হলে যুক্তিসংগত সন্দেহ থাকতে হয়। এর অর্থ, বাছবিচারহীন তল্লাশি চালানোর ক্ষমতা পুলিশের নেই। এটা উচ্চ আদালতের নির্দেশনারও পরিপন্থী।’
কেউ কেউ অভিযোগ করেন, পুলিশ তাঁদের পথ আটকে দেহ তল্লাশি ছাড়াও মুঠোফোনের ছবি ও বার্তা ঘাঁটাঘাঁটি করেছে। এটা ছিল তাঁদের জন্য চরম বিব্রতকর ও হয়রানির বিষয়।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, মুঠোফোনে মানুষের ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, তথ্য বা ছবি থাকতে পারে। তল্লাশির সময় পুলিশ সেগুলো দেখতে পারে না। এটা ব্যক্তির গোপনীয়তাকে ক্ষুণ্ন করেছে। গোপনীয়তা ব্যক্তির সংবিধানস্বীকৃত একটি অধিকার। তাই পুলিশের এ ধরনের কর্মকাণ্ড সংবিধান ও আইনসংগত নয়।
ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ গত দুই দিনে কতজনকে আটক বা গ্রেপ্তার করেছে, সেই তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে এ ধরনের তল্লাশি সাধারণ মানুষের জন্য ব্যাপক ভোগান্তি ও হয়রানির কারণ হচ্ছে, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্ট।
এবারই প্রথম নয়, এর আগেও পুলিশ এমন বাছবিচারহীন দেহ তল্লাশি এবং মুঠোফোন পরীক্ষা করেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তারা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চৌকি বসিয়ে তল্লাশির নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেছে।
মানুষ আশা করে, আইনসংগত নয় এবং মানুষের ভোগান্তি ও হয়রানির কারণ হবে, এমন কর্মকাণ্ড থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরত থাকা উচিত।