নারীর নিরাপত্তা ও ধর্ষণ–নিপীড়নের দ্রুত বিচারের দাবিতে ঢাবিতে মশালমিছিল
নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নির্যাতন ও ধর্ষণের দ্রুত বিচারের দাবিতে সমাবেশ ও মশালমিছিল করেছেন নারী শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে তাঁরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা ১৩ দফা দাবি ঘোষণা করেন। সমাবেশ শেষে রাজু ভাস্কর্য থেকে মশালমিছিল নিয়ে ভিসি চত্বর হয়ে আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে কর্মসূচি শেষ করেন তাঁরা।
সমাবেশে হিলস উইমেন ফেডারেশনের সদস্য রুপসী চাকমা বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পার্বত্য চট্টগ্রামে তিন জেলায় তিনটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অনেক ঘটনা এখনো অগোচরে রয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজের যে পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো, এই কাঠামো বলে, পুরুষ যা চায় তা–ই করতে পারে। তা নাহলে একজন শিক্ষক কীভাবে ধর্ষণ করার সাহস পায়।’
নারীকে বাদ দিয়ে কখনো গণতন্ত্র সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যে নারী সমন্বয়কেরা ছিলেন, শুধু নারী হওয়ার কারণে তাঁদের অনেক সময় বুলিংয়ের শিকার হতে হয়েছে। তিনি বলেন, নারী ক্ষমতায় গেলেই নারীর ক্ষমতায়ন হয় না। হাসিনার আমলেই তনু (সোহাগী জাহান) ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সময়ও তো কোনো ধর্ষণের সুষ্ঠু বিচার হয়নি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন সরকার এলেও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে নূজিয়া হাসিন বলেন, বনানীর রিকশাচালকের মেয়ের ধর্ষণের কোনো খবর গণমাধ্যমেও নেই। তিনি প্রশ্ন করেন, কেন সরকার এই ধর্ষণের চিকিৎসার ব্যয় বহন করছে না? নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য নারীদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ইডেন কলেজ শাখার সভাপতি শাহিনুর সুমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আনিয়া ফাহমি, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল ঢাকা নগরের সংগঠক স্কাইয়া ইসলাম। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান। বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি জানিয়ে নারীদের পাশাপাশি কিছু পুরুষও উপস্থিত ছিলেন।
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা ১৩ দফা দাবি ঘোষণা করেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বনানীতে ৯ বছরের শিশুকে ধর্ষণ, বান্দরবানের কিশোরীকে ধর্ষণ ও এর আগে তনু (সোহাগী জাহান), মুনিয়াসহ (মোসারাত জাহান) প্রতিটি ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচার করা; ধর্ষণের শিকার হলে চিকিৎসা খরচ রাষ্ট্রকে বহন করা; ধর্ষণ ও নিপীড়নের মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মীমাংসা করে ফেলার চাপ না দিতে পারে, তা নিশ্চিত করা; নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যেই নিষ্পত্তি করা; ধর্ম, গোত্র, বর্ণের ঊর্ধ্বে গিয়ে প্রতিটি লিঙ্গের মানুষের সম্পত্তিতে সমানাধিকার দেওয়া; সন্তানের অভিভাবকত্ব আইন পরিবর্তন করা; নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের মামলায় দ্রুততম সময়ে রেসপন্স করার জন্য স্পেশাল ইউনিট গঠন করা।