উজরা আজ আসছেন
মানবাধিকার ও নির্বাচন নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে
চার দিনের সফরের তৃতীয় দিনে উজরা বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে ঢাকায় আসছেন। বাংলাদেশ নিয়ে নতুন মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর এটাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধির ঢাকা সফর।
উজরা জেয়ার ভারত ও বাংলাদেশ সফরের আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জানিয়েছিল, তিনি বাংলাদেশ সফরের সময় শ্রম অধিকার, মানবাধিকার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানব পাচার ও রোহিঙ্গা–সংকট নিয়ে আলোচনা করবেন। উজরা জেয়ার সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচন, মানবাধিকার পরিস্থিতি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রোহিঙ্গা–সংকটসহ দুই দেশের সম্পর্কের যেসব বিষয় নিয়ে তিনি কাজ করেন, সেগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে। এসব বিষয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানার পাশাপাশি বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরব।
ঢাকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রম সমস্যা, মানবাধিকার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানব পাচার ও রোহিঙ্গা–সংকট নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আগামী বৃহস্পতিবার খোলামেলা আলোচনা হবে। তবে নির্বাচনের প্রসঙ্গটি গুরুত্ব পেতে পারে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। সামগ্রিকভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের অঙ্গীকার এবং সর্বশেষ দেশের যেসব সিটি করপোরেশনের নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেটি জোরালোভাবে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারির কাছে তুলে ধরা হবে।
শ্রম অধিকারের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। শুধু কারখানার উন্নতিতে বাংলাদেশ থেমে থাকেনি, শ্রম আইনের সংস্কার, ট্রেড ইউনিয়নে নিবন্ধনসহ শ্রমিক অধিকারের উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এসব উন্নতির যথাযথ প্রশংসার পরিবর্তে অবশিষ্ট সংস্কারের বিষয়গুলোকেই যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব দিচ্ছে। এ বিষয় বাংলাদেশ আলোচনায় আনবে।
দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, উজরা জেয়া আগামী বৃহস্পতিবার সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, শ্রম অধিকার, মানবাধিকার, মানব পাচার ও রোহিঙ্গা–সংকট, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে আলোচনা করবেন।
আলোচনায় মানবাধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ এলে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। তাঁরা জানান, সরকার মনে করে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ডিএসএ) পরিবর্তন আনা হচ্ছে। যে বিষয়গুলো নিয়ে আপত্তি আছে তা সংশোধন করা হচ্ছে। এমনকি প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইনেও (ডিপিএ) উন্নয়ন সহযোগীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে খসড়ায় সংশোধনী আনা হবে। কাজেই বাংলাদেশের সদিচ্ছার এ বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চার দিনের সফরের তৃতীয় দিনে উজরা বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। একই দিনে তিনি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তিনি পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে এক মধ্যাহ্নভোজসভায় অংশ নেবেন।
দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, উজরা জেয়া আগামী বৃহস্পতিবার সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, শ্রম অধিকার, মানবাধিকার, মানব পাচার ও রোহিঙ্গা–সংকট, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে আলোচনা করবেন। সফরের দ্বিতীয় দিনে আগামীকাল বুধবার তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির পরিদর্শনে যাবেন।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল সোমবার বিকেলে তাঁর দপ্তরে প্রথম আলোকে বলেন, মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচন, মানবাধিকার পরিস্থিতি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রোহিঙ্গা–সংকটসহ দুই দেশের সম্পর্কের যেসব বিষয় নিয়ে তিনি কাজ করেন, সেগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে। এসব বিষয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানার পাশাপাশি বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরব।
বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে মার্কিন ভিসা দেওয়া হবে না—এমন শর্ত জুড়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মে মাসে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতির ঘোষণা দেন। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র্যাব এবং বিশেষায়িত ওই বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই নিষেধাজ্ঞাকে ঘিরে দুই দেশের সম্পর্কে একধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল। জানুয়ারির শুরুতে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকায় এসে র্যাবের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্টির কথা জানালে বাংলাদেশ-ওয়াশিংটন সম্পর্কের অস্বস্তি অনেকটা দূর হয়েছিল। কিন্তু নতুন মার্কিন ভিসা নীতি দুই দেশের সম্পর্কের জন্য নতুন করে বাড়তি অস্বস্তি তৈরি করেছে বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।