নির্দেশের পরও ভোটকক্ষে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের পদক্ষেপ দেখা যায়নি: সিইসি
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন কেন বন্ধ করা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ভোটকক্ষে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য ঢাকা থেকে প্রথমে কয়েকজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সে বিষয়ে তাঁদের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন অন্যান্য কেন্দ্রেও অনিয়ম দেখা যায়, সে সময় তিনি নিজেসহ একজন নির্বাচন কমিশনার রিটার্নিং কর্মকর্তা, গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় বিধিবহির্ভূত ভোট গ্রহণ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
এই উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ স্থগিতের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ গতকাল দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশন কেন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি তাঁদের বোধগম্য নয়। দলটির আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ আজ বলেছেন, গাইবান্ধা উপনির্বাচনে মাঠপর্যায়ের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা লিখিত দিয়েছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, নির্বাচনে কোনো গন্ডগোল হয়নি। কিন্তু ৫০০ কিলোমিটার দূরে বসে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নির্বাচন কমিশন পুরো উপনির্বাচন বাতিল করেছে। এ কারণে জনগণই বলছে কমিশনের এ সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ।
আওয়ামী লীগ নেতারা এসব বললেও নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থাটির প্রধান কাজী হাবিবুল আউয়াল আজ দুপুরে আগারগাঁওয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এই উপনির্বাচনের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, গাইবান্ধায় অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুধী সমাজের সঙ্গে সংলাপে ভোটকক্ষে অবৈধ লোকের প্রবেশ ও ভোটারদের সুযোগ না দিয়ে তাঁরা নিজেরা ভোট দিয়ে দেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। এই অনিয়ম ঠেকাতে গাইবান্ধা- ৫ আসনের উপনির্বাচনের গুরুত্ব বিবেচনায় এখানকার ইভিএমে ভোট গ্রহণ ও প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।
বুধবার সকাল আটটায় নিয়মমতো ভোট শুরু হয় জানিয়ে সিইসি বলেন, আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণকক্ষে অন্যান্য নির্বাচনী কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম প্রতিনিধির সঙ্গে তিনি নিজেও ভোট গ্রহণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে ভোটকক্ষে প্রার্থীর পুরুষ এজেন্টদের একই রকম গেঞ্জি দেখা যায়।
তাঁদের বুকে ও পিঠে প্রার্থীর মার্কা ইত্যাদি প্রিন্ট করা ছিল। নারী এজেন্টরা একই রকম শাড়ি পরা ছিলেন। এগুলো নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার লঙ্ঘন। এসব এজেন্ট ছাড়াও আরও অনেক অবৈধ লোকজন ভোটকক্ষে অবস্থান করে ভোটারদের ভোট দিতে প্রভাবিত করছিলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোটারদের কন্ট্রোল ইউনিটে আঙুলের ছাপ দেওয়ার পরপরই এজেন্টরা গোপন ভোটকক্ষে প্রবেশ করে ভোটারকে ভোটদানের সুযোগ না দিয়ে নিজেই ভোট দিয়ে দিচ্ছেন, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ একই কাজ করছেন। তখন কমিশন থেকে ফোন দিয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ভোটকক্ষের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ভোটকক্ষের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ তাঁদের গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। তখন ওই তিন কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করার নির্দেশনা কমিশন থেকে দেওয়া হয়। এরপর একে একে বেলা দেড়টা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ৫০টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ কার্যক্রম দেখা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের অবস্থা একই রকম দেখা যায়। ইতিমধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা একটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেন।
এই পরিস্থিতিতে তিনি নিজে ও নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন বলে জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। অন্যান্য কেন্দ্রেও সিসিটিভি দেখার সময় পেলে দেখা যেত যে ও কেন্দ্রগুলোতেও একই অবস্থা। তাই কমিশন মনে করে যে এই ধরনের একটি আইনবহির্ভূত ভোট প্রদান বা গ্রহণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেলা আড়াইটায় গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।’
অনিয়মগুলো তদন্ত করে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে একটি কমিটি করা হয়েছে বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর গাইবান্ধা–৫ আসনে পরবর্তী নির্বাচন বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।