বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময় বিরোধী মত ও পথকে শ্রদ্ধা করতেন। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা ও সম্মান দেখানো তাঁর রাজনৈতিক আদর্শের অংশ ছিল। চরম ডানপন্থী মুসলিম লীগ থেকে শুরু করে অতি বামপন্থীরাও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন। তাঁদের সঙ্গে তিনি আলোচনার সম্পর্ক রাখতেন। বঙ্গবন্ধুর এই উদারনৈতিক আদর্শ বাংলাদেশের রাজনীতিতে দরকার।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুকে যাঁরা কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁদের স্মৃতিচারণামূলক এ আলোচনা ২০২১ সাল থেকে জাতীয় শোক দিবসকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার তৃতীয়বারের মতো ‘বঙ্গবন্ধুকে কাছে থেকে দেখা—রিমেমব্রেন্স বাই হিজ কনটেমপোরারিজ পার্ট–থ্রি’ শীর্ষক আলোচনাটি বিআইডিএস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বঙ্গবন্ধুর সহকারী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের পর মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলখানায় তাঁর জন্য সুবিধা বাড়াতে বলেন বঙ্গবন্ধু। শাহ আজিজের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সব সময় সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো জীবনযাপন করতেন। তাঁর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে একবার হেলিকপ্টারে করে গোপালগঞ্জে যাওয়ার প্রস্তাব করা হয়। তিনি তাতে রাজি হননি। শেখ কামালের বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের অনুষ্ঠানকে অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।
স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো আওয়ামী লীগ করিনি। তারপরেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত আলাপ–আলোচনার সম্পর্ক ছিল। বাকশাল গঠনের সময় বঙ্গবন্ধু তাঁর বাসার ছাদে ডেকে নিয়ে বাকশালে যোগ দেওয়ার জন্য আহবান জানান। কিন্তু আমি রাজি না হওয়ায় বঙ্গবন্ধু আমাকে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বললেন, স্বাধীনতার পর তোরা আমাকে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বলেছিলি। আমি তো তোদের সেই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাকশাল করছি। কিন্তু তোরা আমার সঙ্গে থাকলি না।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু অনেক বড় হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ভিন্নমত থাকার পরেও সম্পর্ক ছিন্ন করতেন না; বরং ছাত্র ইউনিয়ন ও সিপিবি নেতাদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ এবং পরামর্শ করতেন। তবে তিনি দলের কর্মীদের ব্যাপারে দুর্বল ছিলেন। সেই দুর্বলতার মূল্য তাঁকে দিতে হয়েছে। তাঁকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন।
আলোচনা সভায় বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, বাংলাদেশের প্রগতিশীল ধারার রাজনীতি আওয়ামী লীগকে সমৃদ্ধ ও পুষ্ট করেছে। একটি প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আগামী দিনেও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশ চেয়েছিলেন, সেই পথে এগোনোর জন্য ওই ঐক্যের বিকল্প নেই।