ঢাকা ওয়াসার এমডির দুর্নীতির অনুসন্ধানে সাত কর্মকর্তাকে তলব করল দুদক
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের অনিয়ম, নিয়োগ বাণিজ্য ও বিভিন্ন প্রকল্পে লুটপাটের অনুসন্ধানে সাত কর্মকর্তাকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার লেনদেনসংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানেও নথিপত্র চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ পাঠানো সাত কর্মকর্তা হলেন ঢাকা ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মো. কামরুল হাসান, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান, পরিচালক (উন্নয়ন) মো. আবুল কাশেম, পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন, কো-অর্ডিনেটর অফিসার শেখ এনায়েত আবদুল্লাহ, সহকারী সচিব মৌসুমি খান, ডেপুটি চিফ ফাইন্যান্স অফিসার রত্নদ্বীপ বর্মণ।
আজ সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ চিঠি পাঠান। এর আগে তাকসিম এ খানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে আসা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যের অনুসন্ধানকারী দল গঠন করা হয়।
দুদক সূত্র জানায়, ওয়াসার কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম, এ কে এম সহিদ উদ্দিন, মৌসুমি খান, ডেপুটি চিফ ফাইন্যান্স অফিসার রত্নদ্বীপ বর্মণ ও শেখ এনায়েত আবদুল্লাহ অবৈধভাবে নিয়োগ পান।
পরে শেখ এনায়েত আবদুল্লাহ, প্রধান প্রকৌশলী মো. কামরুল হাসান ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান নিয়মবহির্ভূতভাবে পদোন্নতি পান। এ ছাড়া ওয়াসার পদ্মা জশলদিয়া প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা, গন্ধরবপুর পানি শোধনাগার প্রকল্পে ১ হাজার কোটি টাকা, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পে ১ হাজার কোটি টাকা, গুলশান বারিধারা লেক দূষণ প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকার দুর্নীতিসহ আরও কয়েকটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে দুদক।
দুদকের নোটিশে উল্লেখিত সাত কর্মকর্তার কারও ২০১১, কারও ২০১৫, কারও ২০১৬, আবার কারও কারও ২০২০ সালের পদ-পদবি উল্লেখ করা হয়। তবে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের কাছে পাঠানো এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, ‘বর্ণিত কর্মকর্তারা বর্তমানে আপনার অধীন কর্মরত না থাকলে তাঁদের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা জানানোর জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হলো।’
এ ছাড়া ঢাকা ওয়াসার লেনদেনসংশ্লিষ্ট জনতা ব্যাংকের ওয়াসা ভবন শাখা, এবি ব্যাংক কারওয়ান বাজার শাখা ও ব্র্যাক ব্যাংকের বিজয় নগর শাখার ব্যবস্থাপকদের কাছেও পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড এবং প্রোগ্রাম ফর পারফরম্যান্স ইমপ্রুভমেন্ট (পিপিআই)-সংক্রান্ত স্বাক্ষরিত সব চুক্তির নথি ও তথ্যাদির সত্যায়িত কপি, পিপিআইয়ের নামে পরিচালিত সব ব্যাংক হিসাবের ওপেনিং ফরম, কেওয়াইসি, সিগনেচার কার্ড চাওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ব্যাংক হিসাব খোলা ও পরিচালনা-সংক্রান্ত সমিতির সব কার্যবিবরণী, উপযুক্ত হিসাবগুলোর লেনদেনসহ কার্যক্রম স্থগিতসংক্রান্ত ঢাকা ওয়াসার কোনো লিখিত নির্দেশনা থাকলে, সেসব নথিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি এবং পিপিআইয়ের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবগুলোর ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবের বিবরণী (স্টেটমেন্ট) চাওয়া হয়েছে।
একইভাবে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরের রেজিস্ট্রার বরাবরও চিঠি পাঠানো হয়। এতে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল, গঠনতন্ত্র, আর্থিক আয়-ব্যয়সংক্রান্ত নীতিমালা চাওয়া হয়েছে। আবার ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতিকে দেওয়া চিঠিতে সমিতির মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল, গঠনতন্ত্র আর্থিক আয়-ব্যয়সংক্রান্ত নীতিমালা চাওয়া হয়েছে। সমিতির বর্তমান এবং আগের কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কার্যকরী কমিটির সব সদস্যের নাম, পদবি (দাপ্তরিক ও সমিতির) বর্তমান কর্মস্থলসহ স্থায়ী ঠিকানা চাওয়া হয়েছে। এসব নথিপত্র ‘অতীব জরুরি’ উল্লেখ করে ২০ অক্টোবরের মধ্যে সরবরাহ করার অনুরোধ জানানো হয় নোটিশে।
ছয়টি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের প্রত্যক্ষ মদদে ও নির্দেশে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ আছে। এ অভিযোগে তাকসিম এ খানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়।
এ দিকে তাকসিম এ খানের সব ব্যাংক হিসাব তলব করে গত ২৫ আগস্ট চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।