ঘূর্ণিঝড় রিমালে বেশি মৃত্যু গাছ ও দেয়ালচাপায়

সড়ক বিভাজকের একটি গাছ উপড়ে প্রাইভেট কারের ওপর পড়েছে। সকাল ১০টায়, জসীমউদ্‌দীন সড়ক, উত্তরাছবি: খালেদ সরকার

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে দেশের উপকূলীয় ছয় জেলায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল ও ভোলায় ৩ জন করে মারা গেছেন। এ ছাড়া খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলায় একজন করে মানুষ মারা গেছেন।

কীভাবে এই ছয়জন মারা গেলেন তার বিবরণ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার বিকেলে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বরিশালের বাকেরগঞ্জে দাড়িয়াল ইউনিয়নের চর দাড়িয়াল গ্রামের জালাল সিকদার (৫৫) মারা গেছেন বাজারে যাওয়ার পথে গাছের ডাল ভেঙে। বরিশাল শহরের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেয়াল ভেঙে হোটেলে কর্মরত অবস্থায় মারা যান মো. মোকলেছ (২৮) নামে এক ব্যক্তি। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। একই জায়গায় একই কারণে একই হোটেলে কর্মরত লোকমান হোসেন (৫৮) নামে আরেক ব্যক্তি মারা গেছেন। তাঁর বাড়িও পটুয়াখালীতে।

ভোলায় যে তিন মারা গেছেন তাঁর মধ্যে জাহাঙ্গীর (৫০) মারা গেছেন গাছের চাপায় পড়ে। তাঁর বাড়ি জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের বাথানবাড়ী গ্রামে। দৌলতখান পৌর এলাকায় মাইশা (৪) নামে এক শিশু মারা গেছে গাছ চাপা পড়ে। এ ছাড়া লালমোহন উপজেলায় পশ্চিমচর উমেদি ইউনিয়নের মনেজা খাতুন (৫৪) মারা গেছেন টিনের ঘরের আড়ার নিচে চাপা পড়ে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বসত ঘরের ওপর গাছ পড়ে মারা গেছেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের গাওহড়া গ্রামের লাল চাদ মোড়ল (৩৬)। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামের শওকত মোড়ল (৬৫) মারা গেছেন সাইক্লোন সেন্টারে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে। আর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতা চাপলী ইউনিয়নের কাওয়ার চর গ্রামের মো. শহীদ (২৭) মারা গেছেন জলোচ্ছ্বাসের পানিতে ডুবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানাধীন টেক্সটাইল জেড এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে দেয়াল ধসে ছাইফুল ইসলাম (২৬) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন।

ঘূর্ণিঝড় রিমাল গতকাল রোববার রাত আটটার দিকে মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১১ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বয়ে গেছে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায়। এই ঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে বহু মাছের ঘের।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান আজ সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে উপকূল ও আশপাশের ১৯ জেলা। এগুলো হলো সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর।

প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ১৯ জেলার ১০৭টি উপজেলার বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি। এ ছাড়া আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি।