যুক্তরাষ্ট্রে বসে অফিস করা হচ্ছে না তাকসিম এ খানের
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের আবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে ছয় সপ্তাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বসে অফিস করার অনুমতি পাননি তাকসিম এ খান। সংস্থাটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ) এ কে এম সহিদ উদ্দিনকে এমডির অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের পানি সরবরাহ শাখা থেকে গতকাল বুধবার ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের অনুমতিপত্র জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, চিকিৎসা এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত অথবা যাত্রার তারিখ থেকে ৬ সপ্তাহের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমতিপত্রে বলা হয়, তাকসিম এ খানের ছুটিতে থাকার সময়ে সংস্থাটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ) এ কে এম সহিদ উদ্দিন নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে এমডির দায়িত্ব পালন করবেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পানি সরবরাহ) মো. খাইরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাকসিম এ খান নিজের মতো করে ছুটির আবেদন করেছিলেন। এবার তাঁর ছুটির সিদ্ধান্ত ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সিদ্ধান্তের আলোকে হয়েছে। তিনি ছুটিতে থাকবেন। ডিএমডি সহিদ উদ্দিন এমডির দায়িত্ব পালন করবেন।
তাকসিম এ খান ৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। তিনি অন্য কাউকে এমডির দায়িত্ব না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসে ‘অন ডিউটি’তে থাকবেন বলে আবেদনে উল্লেখ করেন। যদিও তাঁর এই ‘ভার্চ্যুয়াল অফিস’-এর আবেদন নাকচ করে দিয়েছিল ঢাকা ওয়াসা বোর্ড। তাঁর এ আবেদনের বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোতে ‘আবার যুক্তরাষ্ট্রে বসে অফিস করতে চান তাকসিম এ খান’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।
গত ৭ জুলাই ঢাকা ওয়াসার বোর্ড সভায় সদস্যরা এমডির অনলাইনে দায়িত্ব পালনের তীব্র বিরোধিতা করেন। পরে তাঁকে দুই মাসের ছুটি দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয়, এই দুই মাস তিনি পূর্ণ ছুটিতে থাকবেন, ভার্চ্যুয়ালি কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে তাকসিম এ খানের মন্ত্রণালয়ে ‘অন ডিউটি’র বিষয়ে চিঠি দেওয়ায় বোর্ডের সদস্যরাও বিস্মিত হয়েছিলেন।
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডির দায়িত্ব পাওয়া তাকসিম এ খানের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য তিনি প্রায় প্রতিবছরই একটি নির্দিষ্ট সময় সেখানে থাকেন। গত বছরের ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই তিন মাস তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। এর আগে তিনি ২০১৯ সালের ১১ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন।
ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবারই দেশের বাইরে যাওয়ার আগে একটি অফিস আদেশ জারি করেন তাকসিম এ খান। ওই অফিস আদেশের মাধ্যমে তিনি অনলাইনে অফিস করার বিষয়টি জানিয়ে যেতেন। যুক্তরাষ্ট্রে বসেই নথিপত্রে স্বাক্ষরসহ সব কার্যক্রম পরিচালনা করেন। একজনকে এমডির পক্ষে রুটিন দায়িত্ব পালন করতে বলতেন।
এবারই প্রথম কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন তাকসিম এ খান।
গত বছর তাকসিম এ খান ছুটিতে থেকেও নথিপত্রে স্বাক্ষর করেন। অন্যদিকে তাঁর ছুটির সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এমডির দায়িত্ব পাওয়া ওয়াসার পরিচালক (উন্নয়ন) আবুল কাশেমও নথিপত্রে স্বাক্ষর করেন। একসঙ্গে দুজন এমডির দায়িত্ব পালন নিয়ে সমালোচনা হয়। এবার ওয়াসা বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয়, তাকসিম এ খান পূর্ণ ছুটিতে থাকবেন, ভার্চ্যুয়ালি কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।