সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ: ১৮ জনের মৃত্যু, আহত শতাধিক
রাজধানীর গুলিস্তানের পাশে সিদ্দিকবাজারে ভবনে মঙ্গলবার বিকেলে বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ১৮ জন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। বিস্ফোরণের কারণ জানা যায়নি। পুলিশ বলছে, নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা, তা তদন্তে জানা যাবে। আর রাজউক বলছে, জমে থাকা গ্যাসের কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে
রাজধানীর গুলিস্তানের পাশে সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় বিধ্বস্ত ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় উদ্ধারকাজের জন্য ভেতরে ঢুকতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, ভবনের কলাম ধসে পড়ায় ভেতরে ঢোকা সম্ভব হচ্ছে না। আবার কলাম সরিয়ে ঢোকার চেষ্টা করা হলে তাতে ভবনের বাকি অংশটুকু ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে এই ঝুঁকি কমিয়ে বুধবার ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করা হবে। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টার দিকে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়।
এদিকে বিধ্বস্ত ভবনে আরও দুজন আটকা পড়ে আছেন বলে দাবি করেছেন স্বজনেরা। রাজধানীর গুলিস্তানের পাশে সিদ্দিকবাজারে নর্থ সাউথ রোডের গ্রিন সুপারমার্কেটের উল্টো পাশের বহুতল ভবনে মঙ্গলবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। রাত সোয়া ১১টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে শতাধিক ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১১ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রায় চার ঘণ্টা সেখানে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে রাত নয়টার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, ভবনের বেসমেন্ট ও নিচ তলার অনেকটাই ধসে গেছে। ভবনের কলামগুলোও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। যার জন্য তাঁরা ঢুকতে পারছেন না। তাঁরা রাজউক ও সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ মত নিয়েছেন। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে একটু ‘স্টাবল করে’ বাকি উদ্ধার অভিযান করা হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা
আনোয়ারুল কাদির বিকট বিস্ফোরণের শব্দ পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে ভবনের বিধ্বস্ত দুটি ফ্লোর থেকে অনেক ধোঁয়া বের হতে দেখেন। ভবনের ভেতর থাকা মানুষজন তখন উদ্ধারের সহায়তা চেয়ে আর্তনাদ করছিলেন।
পাশের মসজিদসহ আশপাশের লোকজন তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে উদ্ধারকাজে যোগ দেয়। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের মাত্রা এত বেশি ছিল যে নিচতলার লোহার তৈরি ফটক বাঁকা হয়ে গেছে। ভবনের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। বিধ্বস্ত শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে। মূল ভবনের বাঁ পাশে আরও একটা ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনতলা থেকে সাততলা পর্যন্ত ওই ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে লোকজন বাস করতেন।
ঘটনাস্থলে ওয়াহেদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি নিজেকে ভবনমালিক দাবি করে প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। আশপাশের জানালার কাচ ভেঙে পড়তে দেখেন তিনি। ওয়াহেদুর রহমান বলেন, ভবনের নিচতলায় স্যানিটারি সরঞ্জামের কয়েকটি দোকান রয়েছে। বেজমেন্টে এসব দোকানের গুদাম রয়েছে। বিস্ফোরণের পর একতলা ও দোতলার ছাদের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়েছে। বিশেষ করে সিঁড়ি ধসে পড়ায় অনেক লোক নিচে নামতে পারেননি।
বিধ্বস্ত ভবনটির দোতলায় ব্র্যাক ব্যাংকের কার্যালয়। অন্য তলাগুলোতে রয়েছে অনিকা ট্রেডার্স, বাদশা ট্রেডিংসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। বিস্ফোরণের পর সিদ্দিকবাজারে নর্থ সাউথ রোডের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
একটু আগে ভাই আমার লগে দেখা করে আসল। ও আল্লাহ, তুমি এইডা কী করলা!
উদ্ধার তৎপরতা
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুরুতে আশপাশের লোকজন গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর এক বার্তায় জানায়, বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে বিস্ফোরণের খবর আসে। তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। পরে আরও ছয়টি ইউনিট কাজে যোগ দেয়।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক দীনমণি শর্মা সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূলত নিচতলাতেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এর প্রভাব দ্বিতীয় তলাতেও পড়েছে। আমরা এ পর্যন্ত চারটি লাশ উদ্ধার করেছি। অনেকেই আহত হয়েছেন।’ তিনি পরে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বলেন, ‘আমরা ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে মানুষজনকে খুঁজছি। এখন আমরা এটাকেই গুরুত্ব দিচ্ছি।’
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত ৯টা পর্যন্ত ১৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৪০ জনকে। রাত ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘যখন বিস্ফোরণ ঘটে, তখন মার্কেটটি চালু ছিল। মার্কেটে কর্মচারী ছিল, ক্রেতাও ছিল। এ জন্য আমরা বলতে পারছি না, ভেতরে কতজন আছে।’ সেখানে লোকজন আটকা থাকতে পারেন বলে মনে করছেন তিনি।
পরে মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টার দিকে উদ্ধারকাজ স্থগিতের কথা জানান ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক দিনমনি শর্মা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় ভবনের ভূ-গর্ভস্থ স্থানে উদ্ধার কাজ চালানো সম্ভব নয়। বুধবার (আজ) সকালে সেনাবাহিনী আসবে, তারপর উদ্ধার কাজ শুরু হবে।
হতাহতরা ঢাকা মেডিকেলে, স্বজনদের আহাজারি
হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় আহত শতাধিক ব্যক্তিকে সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানিয়েছেন। এসব ব্যক্তিদের বেশির ভাগই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। মোট ১৯ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বিস্ফোরণের পরপরই ঢাকা মেডিকেলে ভিড় করছিলেন হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। কেউ উদ্বিগ্ন হয়ে স্বজনদের খোঁজ করছিলেন, কেউ করছিলেন আহাজারি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণে আহত ব্যক্তিদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাঁদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে এখনো হাসপাতালে আনা হচ্ছে। অনেককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। নিহত ব্যক্তির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
হাসপাতালের সামনে বিলাপ করছিলেন তরুণী সোমা, ‘একটু আগে ভাই আমার লগে দেখা করে আসল। ও আল্লাহ, তুমি এইডা কী করলা?’ তাঁর ভাই সুমন (২১) ওই বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন। মা রোজা রেখেছিলেন। তাঁর জন্য ইফতারসামগ্রী কিনতে বের হয়ে তিনি বিস্ফোরণে নিহত হন। সুমনের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে আসেন সোমাসহ তাঁর স্বজনেরা। কাতারপ্রবাসী সুমন চার মাসের ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। মা, দুই বোন আর এক ভাইকে নিয়ে বংশালের সুরিটোলায় থাকতেন সুমন।
বিস্ফোরণের মাত্রা এত বেশি ছিল যে নিচতলার লোহার তৈরি ফটক বাঁকা হয়ে গেছে। ভবনের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। বিধ্বস্ত শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে। মূল ভবনের বাঁ পাশে আরও একটা ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনতলা থেকে সাততলা পর্যন্ত ওই ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে লোকজন বাস করতেন।
নিহতদের পরিচয়
বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে কেউ গিয়েছিলেন ওই ভবনে পণ্য কিনতে, কেউ বের হয়েছিলেন ইফতারি কিনতে, কেউবা ব্যবসায়িক কাজে রাস্তায় বের হয়েছিলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী ১৭ জনের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। বিস্ফোরণে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের একজন যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা মনসুর হোসাইন। তিনি গুলিস্তানের একটি বিপণিবিতানে মশারির ব্যবসা করতেন। তাঁর ভায়রা মুরাদ হোসেন মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরণের ২০ মিনিট আগে সিদ্দিকবাজারের ওই ভবনে স্যানিটারি পণ্য কিনতে গিয়েছিলেন মনসুর। মনসুরের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের উত্তর মতলবে। তাঁর ৮ বছরের একটি ছেলে আছে।
বিস্ফোরণে নিহত ইসহাক মৃধা (৩১) থাকতেন নারায়ণগঞ্জে। ঢাকার ইসলামপুরে কাপড়ের দোকান ছিল তাঁর। মঙ্গলবার বিকেলে ভবনটির সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। ইসহাকের মামাতো ভাই হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়িক কাজে বিকেলে গুলিস্তান এলাকায় গিয়েছিলেন ইসহাক। দোকানে ফেরার পথে প্রাণ হারাতে হয়েছে ইসহাককে। তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে।
বিস্ফোরণে নিহত আরেকজনের নাম সুমন (২১)। থাকতেন বংশালের সুরিটোলায়। বিকেলে মায়ের জন্য ইফতারি কিনতে বের হয়েছিলেন। কিন্তু বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
বিস্ফোরণে আরও নিহত হয়েছেন লালবাগের ইসলামবাগের দম্পতি মমিনুল ইসলাম (৩৮) ও তাঁর স্ত্রী নদী আক্তার (৩৬), বংশালের আলুবাজারের মো. ইসমাঈল হোসেন (৪২), কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ চুনকটিয়া মাস্টারবাড়ির মো. রাহাত (১৮), চাঁদপুরের মতলব উপজেলার আলামিন (২৩)। মুন্সিগঞ্জ সদরের মাঈন উদ্দিন (৫০), বংশালের নাজমুল হোসেন (২৫), মানিকগঞ্জের ওবায়দুল হাসান বাবুল (৫৫), মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার আবু জাফর সিদ্দিক (৩৪), বংশালের আকুতি বেগম (৭০), যাত্রাবাড়ীর ইদ্রিস মীর (৬০), কিশোরগঞ্জের হৃদয় (২০), যাত্রবাড়ীর নুরুল ইসলাম ভূইয়া (৫৫) ও কেরাণীগঞ্জের সিয়াম (১৯)।
এ ছাড়া বিস্ফোরণস্থল থেকে একজনের লাশ ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। হাসপাতালের রেকর্ডে নাম তোলার আগে স্বজনেরা লাশ নিয়ে যায়। লাশটি সম্রাটের (২৮) বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা। সম্রাটের চাচা কামাল হোসেন জানান, সম্রাটের লাশ নেওয়া হয়েছে। সম্রাটের বাড়ি বংশালের ২৫ নং মালিটোলা লেনে। সম্রাট বিধ্বস্ত ভবনটির একটি দোকানে কাজ করতেন। সম্রাটের দুই সন্তানের মধ্যে একজনের বয়স ৫ মাস, আরেকজনের ৪ বছরের মতো। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া বলেন, একটি লাশ স্বজনেরা নিয়ে গেছেন। তাঁর নাম সম্রাট কিনা জানি না।
বার্ন ইউনিটে ১১ জন
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১১ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন মো. হাসান (৩২), মো. ইয়াসিন (২৬), মো. মুসা (৪৫), খলিল (৫০), আজম (৩৬), অলি সিকদার (৫৫), বাবলু (২৫), আল আমিন (২৫), বাচ্চু মিয়া (৫৫), জাহান (২৫) ও মোস্তফা (৫০)।
নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা, তদন্তে বলা যাবে: পুলিশ
বিস্ফোরণের ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের খবর নিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। এর আগে তিনি বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করেন। হাসপাতালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এই বিস্ফোরণের ঘটনা নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভবনটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বোমা বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞসহ অন্য বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে গেছেন। তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন এটি নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা। অনেক সময় গ্যাস জমলেও বিস্ফোরণ হতে পারে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন।
এদিকে আইএসপিআর জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ১২ সদস্যের মিলিটারি পুলিশ, চিকিৎসকসহ তিনটি অ্যাম্বুলেন্স বিস্ফোরণস্থলে পৌঁছেছে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) জানায়, তাদের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটও বিস্ফোরণস্থলে গেছে। এ ছাড়া পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটও সেখানে গেছে।
ভবনটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বোমা বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞসহ অন্য বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে গেছেন। তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন এটি নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা।
‘গ্যাসের কারণে বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে’
সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রাজউকের চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, অনেক সময় জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটে। এখানেও জমে থাকা গ্যাসের কারণে বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে।
ঘটনাস্থল থেকে রাজউকের পরিচালক (অঞ্চল-৫) হামিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এই মুহূর্তে রাজউকের পক্ষ থেকে উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভবনটি নকশা মেনে তৈরি হয়েছিল কি না এবং ভবনের ব্যবহার ঠিক ছিল কি না, তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে রাজউকেব চেয়ারম্যান ভবনটির নকশা, ব্যবহার ও অন্যান্য বিষয় ঠিক ছিল কি না, তা যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামীকাল থেকে কমিটি কাজ শুরু করবে।
রক্তক্ষরণে বেশির ভাগ মৃত্যু: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণে নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগের মৃত্যু হয়েছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে। কিছু লোকের শরীর পুড়েও গেছে। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সাতজন ভর্তি হয়েছেন। দু-একজনের শরীরের ৮০ ভাগ পুড়ে গেছে। মন্ত্রী হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের খোঁজখবর নেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল থেকে রাতেই লাশ হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রাত পৌনে ১২ টা পর্যন্ত দুজনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিহতদের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা, আহতদের ২৫ হাজার টাকা এবং কম আহতদের ১৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।