চট্টগ্রামে চিনিকলের আগুন নেভেনি, কর্ণফুলীতে দূষণে মরে গেছে ১১ প্রজাতির মাছ-কাঁকড়া
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানা এলাকায় এস আলম চিনিকলের গুদামে লাগা আগুন চার দিনেও পুরোপুরি নেভেনি। এদিকে অপরিশোধিত গলিত চিনি মেশানো পানি মিশে যাওয়ায় কর্ণফুলী নদী দূষণের কবলে পড়েছে। মারা গেছে ১১ প্রজাতির মাছ-কাঁকড়া।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত চিনিকল পরিদর্শন করেন।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানানো হয়, আগুন নির্বাপণের জন্য ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গত সোমবার কর্ণফুলী নদীর পারে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের গুদামে আগুন লাগে। কারখানার পাশে অপরিশোধিত চিনি রাখার পাঁচটি গুদাম ছিল। যে গুদামটিতে আগুন লেগেছে, তাতে ৬০ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি ছিল বলে মিল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।
আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর পৃথক দল ঘটনাস্থলে যায়। সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে পুরোপুরি নেভানো যায়নি।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটনে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমানকে।
নদীতে দূষণের কারণে এখন পর্যন্ত ১১ প্রজাতির মাছ ও কাঁকড়া মারা গেছে।শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ, চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
আগুন লাগার পর চিনিকলের জায়গা ইছানগর ও আশপাশের এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। চিনিকলের গলিত চিনিমিশ্রিত পানির কারণে কর্ণফুলী নদীতে মাছসহ নানা জলজ প্রাণী মারা গেছে।
গতকাল বুধবার থেকে কর্ণফুলী নদীতে মৃত মাছ ভেসে উঠতে দেখা গেছে। স্থানীয় জেলে ও পরিবেশবিদদের মতে, নদীর পানি দূষিত হওয়ার কারণে এত মাছ মারা যাচ্ছে। কেননা, গুদাম থেকে ১০০ মিটারের দুটি নালা ঘুরে নদীটিতে গিয়ে পড়ছে গলিত চিনিমিশ্রিত পানি পানি। পোড়া তেলের মতো অপরিশোধিত চিনির বর্জ্য নদীতে ভাসতে দেখা যাচ্ছে।
জেলা মৎস্য দপ্তর গতকাল নদী থেকে মৃত মাছ ও পানির নমুনা সংগ্রহ করেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়েছে, দূষণের কারণে নদীতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে। এতে বিপুল মাছের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, নদীতে দূষণের কারণে এখন পর্যন্ত ১১ প্রজাতির মাছ ও কাঁকড়া মারা গেছে।
আশার কথা হলো কর্ণফুলীতে জোয়ার-ভাটা আছে। এ কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দূষণ কমে আসবে। তবে আগে থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া গেলে এ ক্ষতি হতো না।মনজুরুল কিবরীয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক।
বিশেষজ্ঞরা জানান, কর্ণফুলী নদীর যেসব এলাকায় পোড়া চিনিমিশ্রিত পানি মিশছে, ওই এলাকাগুলোর জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকিতে থাকবে বলে মনে করছেন তাঁরা। কর্ণফুলীর অন্যতম বিপন্ন প্রাণী গাঙ্গেয় ডলফিনও এতে ঝুঁকিতে পড়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরীয়া প্রথম আলোকে বলেন, পোড়া চিনির বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ায় নদীর পানিতে কার্বন ডাই–অক্সাইড বেড়ে গেছে। দ্রবীভূত অক্সিজেন মারাত্মকভাবে কমে গেছে। এ কারণে চিংড়ির পাশাপাশি ক্যাটফিশজাতীয় মাছও মারা যাচ্ছে। ডলফিনের ঝুঁকিও বেড়েছে।
মনজুরুল কিবরীয়া আরও বলেন, আশার কথা হলো কর্ণফুলীতে জোয়ার-ভাটা আছে। এ কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দূষণ কমে আসবে। তবে আগে থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া গেলে এ ক্ষতি হতো না।