কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আইনজীবী নেতারা পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেন।
প্রথমে সমিতির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির দুই সদস্যকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে সমিতির সম্পাদক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির অপর ছয় সদস্যকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মাহবুব উদ্দিন খোকন অভিযোগ করে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ যদি ১৫ দিন আগে হাইকোর্টের রায় বাতিল চেয়ে চেম্বার জজে আবেদন করত এবং শুনানি এগিয়ে আনার আবেদন করত, তাহলে হতাহতের ঘটনা ঘটত না। অপর সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘ত্বরিত শুনানির ব্যবস্থা আমরাই করেছি। সভাপতি (মাহবুব উদ্দিন খোকন) বললেন যে বিলম্ব হয়েছে। এখানে সরকারের তরফ থেকে কোনো বিলম্ব নেই। বরং তারাই এটাকে ভুল পথে, চক্রান্তের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঠে নামিয়েছে।’
নিহতদের সংখ্যা কেন গোপন করছে
সংবাদ সম্মেলনে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, এখন পর্যন্ত কতজন আন্দোলনকারী নিহত ও আহত হয়েছেন, তার কোনো সংখ্যা সরকারের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে জানানো হয়নি। তিনি বলেন, ‘…হতবাক হয়ে যাই, সরকার কেন নিহতদের সংখ্যা গোপন করছে?’
মাহবুব উদ্দিন খোকন অভিযোগ করে বলেন, তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই গণহারে গ্রেপ্তার শুরু হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও বেসরকারি সম্পদ ধ্বংসকারীদের সত্যিকার পরিচয় উদ্ঘাটন না করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও আইনজীবীদের গণহারে গ্রেপ্তার না করার অনুরোধ জানাচ্ছি। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সংবিধানের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে আমরা মনে করি।’ তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ যদি ১৫ দিন আগে হাইকোর্টের রায় বাতিল চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করত এবং শুনানি এগিয়ে আনার আবেদন করত, তাহলে এত হতাহতের ঘটনা ঘটত না। সরকারি ও বেসরকারি সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। সরকারের ধীরগতি সিদ্ধান্তের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর দায়ভার সরকারের।
প্রকৃত ঘটনা ও সত্য তুলে ধরতে গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানান মাহবুব উদ্দিন খোকন। পাশাপাশি কারফিউ প্রত্যাহার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম-ইন্টারনেট চালু করা ও মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি। এ সময় সমিতির সভাপতির সঙ্গে ছিলেন সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ ফজলে এলাহি ও ফাতেমা আক্তার।
বিএনপি এবারও রশি ছিঁড়ে পড়ে গেছে
এর পরপরই একই মিলনায়তনে অপর সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলন যখন থেকে শুরু হলো, তখন থেকে সরকার, আমরা (সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত), অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে সিএমপি (রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন), সিপি (লিভ টু আপিল) দায়েরসহ পরবর্তী সময়ে নিজে পক্ষ হয়ে ত্বরিত শুনানির ব্যবস্থা আমরাই করেছি। চূড়ান্ত রায়ের মাধ্যমে কোটা আন্দোলনের যে ইস্যুটা ছিল, সেটি চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে। সবাই এর প্রশংসা করছেন।’
সমিতির সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সরকারের প্রতিটি উন্নয়নকাজকে ব্যাহত ও ধ্বংস করতে চেয়েছে। সমিতির পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা জানাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখনই কোনো আন্দোলন দেখে, খড়কুটায় মানুষ যেমন ভাসমান হতে চায়, বিএনপি কিন্তু সেই ভাসমান অবস্থায় বিভিন্ন আন্দোলনের হাত ধরতে চায়।…আকাশ ধরার চেষ্টা করে, কিন্তু সেখানে পৌঁছাতে পারে না, রশি ছিঁড়ে পড়ে যায়। বিএনপি এবারও রশি ছিঁড়ে পড়ে গেছে। স্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হবে না।’
শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন বিদ্যমান। আইনের শাসনে যেভাবে গ্রেপ্তার করতে হয়, সেভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যাঁরা দোষী, সমিতির পক্ষ থেকে তাঁদের বিচারের দাবি করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বক্তব্য দেন। এ সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সহসভাপতি রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ নূরুল হুদা আনছারী, সহসম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ন কবির, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য রাশেদুল হক উপস্থিত ছিলেন।