বাহাত্তরের সংবিধানকে ‘কবর দেওয়ার’ কথা গ্রহণযোগ্য নয়

বাহাত্তরের সংবিধানকে ‘ছুড়ে ফেলে দেওয়া’ বা ‘কবর দেওয়া’র মতো কথা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের কথা মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও সংবিধান প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সর্বোপরি দেশের জনসাধারণকে অবজ্ঞা করার শামিল।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশের খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের সন্তানেরা গত শনিবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন। বাহাত্তরের সংবিধান নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।

বিবৃতিতে বলা হয়, অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও সংবিধানকে টার্গেট (লক্ষ্যবস্তু) করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী সংবিধান’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সংবিধান ‘ছুড়ে ফেলা’ এমনকি সংবিধানের ‘কবর রচনা’ করার কথাও বলা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে যে সংবিধান রচিত হয়েছে, তার সঙ্গে এই দেশের প্রত্যেক মানুষের আবেগ, অনুভূতি ও স্বপ্ন-সাধনা জড়িত।

বিবৃতিতে বাহাত্তরের খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের সন্তানেরা বলেন, ‘আমরা এ–ও মনে করি, ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে এ পর্যন্ত অনেক সংশোধনী আনা হয়েছে, যার সব কটি দেশ ও জনগণের স্বার্থে করা হয়নি। সংবিধানকে অধিকতর গণতান্ত্রিক করা এবং দেশের গণতন্ত্র সুসংহত করতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে এই সংবিধানে সংশোধন ও পরিমার্জন, পরিবর্তন করতে পারেন। কিন্তু সংবিধান “পুনর্লিখন” বা “ছুড়ে ফেলে দেওয়া” কিংবা “কবর দেওয়া”র মতো কথা বলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন বাহাত্তরের খসড়া সংবিধান কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলামের মেয়ে তানিয়া আমীর, তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ, অধ্যাপক হাফেজ হাবীবুর রহমানের ছেলে মইনুর রহমান, এ কে মোশাররফ হোসেন আকন্দের ছেলে মাসুদ আলম আকন্দ, অধ্যাপক খোরশেদ আলমের মেয়ে নাসরিন আলম, লুৎফর রহমানের মেয়ে জেবুন নাহার শিউলী, মুহাম্মদ আবদুর রশীদের ছেলে সাজ্জাদুর রশীদ, নাইমূর রশীদ ও সাইফুল রশিদ, মোহাম্মদ বায়তুল্লাহর মেয়ে পারভীন আক্তার, শামসুদ্দীন মোল্লার ছেলে আহমেদ জাকারিয়া, শেখ আবদুর রহমানের ছেলে শেখ আনিসুর রহমান, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে মইনুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরীর মেয়ে নাসরিন ইসলাম, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের ছেলে মোহাম্মদ জহির, আইনজীবী দেওয়ান আবুল আব্বাছের ছেলে দেওয়ান আফতাবুল আলম।