ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও গ্রেপ্তার
মতপ্রকাশের অধিকারের ভয়ানক লঙ্ঘন: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। যেভাবে শামসুজ্জামানকে বাসা থেকে তুলে আনা হয়েছে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তাকে মতপ্রকাশের অধিকারের ভয়ানক লঙ্ঘন আখ্যায়িত করেছে সংস্থাটি।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অবিলম্বে প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক রয়েছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো পত্রিকার অনলাইনে প্রকাশিত একটি সংবাদ লেখার জন্য শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়া হয়। ওই প্রতিবেদনটি ছিল জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে। গত ২৯ মার্চ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একদল সদস্য সাদাপোশাকে বাড়িতে গিয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে আসে। এরপর প্রায় ১০ ঘণ্টা তাঁর অবস্থান জানা যাচ্ছিল না।
শামসুজ্জামান ছাড়াও একজন আলোকচিত্রীসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের মামলায় আসামি করা হয়েছে। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আসামি করা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি বলেছে, ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ অনলাইনে ভিন্নমত প্রকাশকারী ব্যক্তিদের দমন এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করতে এটা ব্যবহার করছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারকর্মীদের পরিস্থিতিবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়াররা বলছেন, শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে যেসব ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারাগুলোর মধ্য দিয়ে বিস্তৃত পরিসরের বক্তব্যকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায়। তাঁরা বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশ সরকারকে ব্যক্তিকে তাঁর ব্যক্তিগত মতপ্রকাশের জন্য অন্যায্যভাবে শাস্তি দেওয়ার বড় সুযোগ করে দিয়েছে।
অ্যামনেস্টি বলেছে, বাংলাদেশে নাগরিকেরা নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছেন। এর মধ্যে গুম, স্বেচ্ছাচারী আটক ও নির্যাতনের ঘটনা রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাবশালী ব্যক্তি বা সরকারের সমালোচনার জন্যই তা হয়ে থাকে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও এখানে সাংবাদিকেরা তাঁদের কাজের জন্য শাস্তির মুখে পড়ছেন। এই প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল বা মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতি রেখে সংশোধন এবং এই আইনের আওতায় আটক অপর ব্যক্তিদের মুক্তি দাবি করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।