পুলিশ ফ্যাসিস্ট সরকারের লাঠিয়াল হয়ে উঠেছিল: আইজিপি

আইজিপি বাহারুল আলম বিআরপিওডব্লিউএ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বরছবি: বিজ্ঞপ্তি

দেশে বিপ্লবের আগের সময়ে পুলিশ ফ্যাসিস্ট সরকারের লাঠিয়াল হয়ে উঠেছিল বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। তিনি বলেন, পুলিশের নেতৃত্ব স্তর ভেঙে পড়েছিল, জন–আস্থা থেকে পুলিশ ছিটকে পড়েছিল। এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, জনগণের কাছে পুলিশকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা।

রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মিলনায়তনে আজ শনিবার দুপুরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আইজিপি বাহারুল আলম এ কথা বলেন। বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতি (বিআরপিওডব্লিউএ) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

আইজিপি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ একটি ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে পুলিশকে এমন অবস্থায় পতিত হতে হয়নি। জুলাই-আগস্ট বিপ্লব-পূর্ব ও বিপ্লব–উত্তর পুলিশের পরিস্থিতির মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। বিপ্লবের আগের সময়ে পুলিশ হয়ে উঠেছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের লাঠিয়াল। ফলে পুলিশকে জনরোষের শিকার হতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘উদ্যম, আগ্রহ আর নিষ্ঠা নিয়ে আমরা পুলিশকে সংগঠিত করছি। এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পুলিশকে সুসংগঠিত করা, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা এবং এ পুলিশ যাতে আর কখনো জনবিরোধী অবস্থানে ফিরে যেতে না পারে সে ব্যবস্থা করা।’

আইজিপি বলেন, জাতীয় জীবনে গর্ব করার মতো অবদান আছে পুলিশের। এই বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদারদের আক্রমণ রুখে দিয়ে গড়ে তুলেছিল সশস্ত্র প্রতিরোধ। আমরা সে বাহিনীর উত্তরসূরি। জুলাই বিপ্লব–পরবর্তী পুলিশের পুনর্গঠনের পবিত্র দায়িত্ব আমার ওপর বর্তেছে। আশা করি, পুলিশ পুনর্গঠনের এ চ্যালেঞ্জিং সময়ে অবসরপ্রাপ্ত সব পুলিশ সদস্য আমাকে সহায়তা করবেন।’ তিনি বলেন, ‘অপরাধ কমাতে পুলিশের কাছে ওইভাবে কোনো “ম্যাজিক” নেই। অপরাধ কমাতে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীকে জাগিয়ে তোলা, আস্থা ও মনোবল ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই মানুষের আরও কাছে যেতে। মানুষ আমাদের আরেকটু সহযোগিতা করুক, গ্রহণ করুক। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রতিনিধিদেরও সাহায্য চাচ্ছি। তারা যেন আমাদের কমিউনিটির কাছে নিয়ে যেতে আরেকটু প্রচেষ্টা চালান।’

ঢাকাসহ সারা দেশে চুরি, ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড বেড়েছে, পুলিশ কী ভূমিকা নিচ্ছে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘ঢাকাসহ সারা দেশের পুলিশ সুপারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আপনারা জানেন, কী অবস্থা এবং কোথা থেকে উঠে এসে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।’

বিভিন্ন জেলার ছাত্র সমন্বয়কদের হত্যার হুমকির প্রশ্নে আইজিপি বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনা বিশ্লেষণ করেছি এবং সুরাহা করেছি। কালিয়াকৈরের ঘটনা ছিনতাইয়ের। নারায়ণগঞ্জের ঘটনা মোবাইল ছিনতাইয়ের। এ ছাড়া দুটি হুমকির ঘটনা আছে। একটা ময়মনসিংহের। ...প্রতিটি ঘটনার সুরাহার জন্য চেষ্টা করছি। তবে প্রতিটি ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা, তা নয়।’

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আইজিপি বলেন, এটা (তদন্ত) কমিটি বলবে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।

এর আগে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে বিআরপিওডব্লিউএ ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর সমিতির মৃত্যুবরণকারী সব সদস্য ও গত জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদাতবরণকারী সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। পরে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে আইজিপি বাহারুল আলম সমিতির পক্ষ থেকে সমিতির পাঁচজন বয়োজ্যেষ্ঠ পুলিশ সদস্যকে সম্মাননা ক্রেস্ট দেওয়া হয়। কমিউনিটি পুলিশিং ও সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে বিশেষ অবদানের জন্য তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘এস এম আহসান স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হয়। এ ছাড়া নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু সুরক্ষায় ভিকটিম সাপোর্ট কার্যক্রমে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘প্রফেসর অনামিকা হক লিলি-ড. এম এনামুল হক অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়।

এরপর সমিতির পক্ষ থেকে পুলিশ পরিবারের ৫৮ সন্তানকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করায় বৃত্তি ও সনদ দেওয়া হয়।