সরকার সাংবাদিক সম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার করতে চায় না বলে মনে করেন সাংবাদিক নেতারা। তাঁরা বলছেন, আইনমন্ত্রী বলেছেন তদন্তের প্রয়োজনে ৫০ বছর লাগলেও সময় দিতে হবে। এটা শুধু উপহাস। সরকার সাগর-রুনি হত্যার বিচার করতে চায় না। এটা আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণিত। যদি এই হত্যার বিচার না হয়, তবে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন বন্ধ হবে না।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন। সাগর–রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচারের দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
১ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার ঘটনায় সঠিকভাবে দোষী নির্ণয়ে তদন্তের জন্য প্রয়োজনে ৫০ বছর সময় দিতে হবে।
উল্লেখ্য, মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমার তারিখ এ পর্যন্ত ১০৫ বার পিছিয়েছে। এখনো তদন্ত শেষ করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আইনমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে আজকের বিক্ষোভ সমাবেশে বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘আপনি কত বছর আইনমন্ত্রী থাকবেন? তবে এই বাংলার মাটিতে সব সাংবাদিক হত্যার বিচার হবে। এ দেশের সাংবাদিক সমাজ সব সাংবদিক হত্যার বিচার নিশ্চিত করেই রাজপথ ছাড়বে।’
অবিলম্বে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার ও ক্ষমাপ্রার্থনার দাবি জানিয়ে বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, এক যুগ আগে নৃশংসভাবে সাগর-রুনি খুন হয়ে গেলেন। অথচ খুনের প্রকৃত কারণ বের করা গেল না, সেটি অগ্রহণযোগ্য। খুনিদের শনাক্ত করা না গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, এটাই স্বাভাবিক।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হলো নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু গত ১৫ বছরে ৬০ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছে। কোনো হত্যার বিচার হয়নি।
ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খানের সঞ্চলনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক, যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম, বিএফইউজের প্রচার সম্পাদক শাহজাহান সাজু, ডিইউজের দপ্তর সম্পাদক ইকবাল মজুমদার প্রমুখ।
মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও তাঁর স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন। সে সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তারা বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে প্রায় এক যুগ হয়ে গেলেও এখনো এ মামলার বিচারই শুরু করা যায়নি। এই সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে বিভিন্ন সময় রাজপথে আন্দোলন করেছে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো।
মামলাটি প্রথম তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত র্যাবকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। তখন থেকে মামলাটির তদন্ত করছে র্যাব।