নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, আশ্রয়কেন্দ্রে দেড় লাখের বেশি মানুষ

বন্যা কবলিত নোয়াখালীর সেনবাগ পৌরসভার ডাকবাংলা এলাকা। আজ বিকেলে তোলাছবি: প্রথম আলো

নতুন করে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় নোয়াখালীর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গতকাল শনিবার দিনে বৃষ্টি না হওয়ায় কিছু এলাকার বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও রাতের বৃষ্টিতে সেটি আবার বেড়ে গেছে। আজ রোববার সকাল থেকেও জেলার সর্বত্র হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি পাশের ফেনী জেলার বন্যার পানি ঢুকে নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় এরই মধ্যে জেলার ২০ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া জেলার আটটি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখ ৬২ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া বন্যার পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলায় গতকাল একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে জেলায় নিচের সংখ্যা চারজনে দাঁড়াল।

জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সকাল ৯টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলা শহর মাইজদীতে ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা শহর মাইজদী, চাটখিল ও সেনবাগের অনেক এলাকা এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

জেলার চাটখিল উপজেলার বন্যা পরিস্থিতিকে মারাত্মক বলে উল্লেখ করেছেন সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী এহসান উদ্দিন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গত রাতে বৃষ্টি ও উজানের পানি ধেয়ে আসার কারণে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। এতে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লোকজনের সংখ্যা ২০ হাজারে ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে। তাই চাটখিলে ত্রাণসহায়তা আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

চাটখিলের পাশাপাশি জেলার সেনবাগের বন্যা পরিস্থিতিও এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। সেনবাগ পৌরসভার অনেক এলাকায় এখনো হাঁটুসমান পানি রয়েছে। সেনবাগের সাবেক পৌর কাউন্সিলর খোরশেদ আলম বলেন, বন্যার পানিতে তিনি নিজেও এখন বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ঘরের ভেতর হাঁটুপানি উঠে গেছে। এ কারণে তিনি নিজেও পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রতিবেশীর দ্বিতল বাড়িতে উঠেছেন। বৃষ্টির পাশাপাশি ফেনীর দিক থেকে বন্যার পানি আসা অব্যাহত থাকায় সেনবাগের বন্যা পরিস্থিতি প্রতিদিনই অবনতি হচ্ছে।

নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীতেও অনেক এলাকা এখনো পানির নিচে। আজ সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, মাইজদীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনের সড়কে প্রায় হাঁটুপানি। শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা বিবি খোদেজা প্রথম আলোকে বলেন, বাড়ির উঠানে এখনো কোমরসমান পানি। ঘরের ভেতর হাঁটুপানি। রান্নাঘরের চুলা ডুবে গেছে অনেক আগে। বাইরে থেকে কিনে আনা শুকনা খাবার এবং প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার এই টিকে আছেন কোনোরকম। রাতের বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

বন্যার কষ্টের কথা জানান জেলা শহরের রশিদ কলোনি এলাকার বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা মনু দাশ গুপ্ত। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ঘরের ভেতর হাঁটুপানি। বাধ্য হয়ে ঘরের ভেতর সব জিনিসপত্র রেখে শুধু পরনের কাপড় নিয়ে ঘর ছেড়েছেন। উঠেছেন নিজের পুরোনো একটি অফিসকক্ষে। বন্যার পানিতে ঘরের আসবাবসহ অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যাকবলিত সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, চাটখিল ও সদর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক পরিবারের কাছে এখনো সরকারি–বেসরকারি সহায়তা পৌঁছায়নি। বুকসমান পানির কারণে এসব এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা যাচ্ছে না।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহিদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, যেসব এলাকায় সরকারি–বেসরকারি কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি, সেগুলোর তালিকা নেওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা। তালিকা হাতে পাওয়ার পরই সব এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।