‘বের হয়েছিলাম মেয়েসহ, ফিরলাম খালি হাতে’
‘আমার মেয়েটি হাসপাতালে যাওয়ার পরও প্রথম দুদিন কথা বলেছে। আম্মু ডেকেছে। আর মাঝেমধ্যে অস্থির হয়ে যেত। কিন্তু দুদিন পর থেকে আর কোনো কথা বলেনি।
শুধু ছটফট করত। এরপর গতকাল বুধবার সকালে মেয়ের লাশ নিয়ে গেল কবরস্থানে।’
ফোনের ওপারে থাকা ফারজানা আকতারের ফুঁপিয়ে কান্নার চাপা শব্দ আঁচ করা যায়।
তাঁর দেড় বছরের মেয়ে মেহেরিম আকতার গত মঙ্গলবার রাত তিনটায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। তার ডেঙ্গু হয়েছিল। ১৮ জুলাই তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
নগরের বিশ্বকলোনি এলাকার বাসিন্দা ফারজানা। তাঁর স্বামী মো. ইমরান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাঁদের বাড়ি ফেনী। মেহেরিম তাঁদের একমাত্র সন্তান। তাকে হারিয়ে এই দম্পতি এখন শোকে পাথর।
মেহেরিমের মামা শহীদুল ইসলাম বলেন, ১৮ জুলাই মেহেরিমের জ্বর আসে। ওই দিনই মেয়েকে নিয়ে মা ও শিশু হাসপাতালে যান। কিন্তু সেখানে শয্যা খালি না থাকায় ভর্তি করাতে পারেননি। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। সেখানে প্রথম দিকে ভালোই ছিল। রোববার তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়।
ফারজানা পরিবার নিয়ে থাকেন তাঁর বাবা আনসার আলীর বাসায়। তিন বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়। মেহেরিম সবার খুব আদরের ছিল। সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখত ঘরটিকে। বাবা ইমরান রাতে কাজ থেকে বাড়ি ফিরলে মেয়েকে নিয়ে মেতে থাকতেন। নগরের আকবরশাহ থানার পাশে কবরস্থানে মেহেরিমকে দাফন করা হয়েছে।
ফারজানা বলেন, ‘মেয়েটি আব্বু, আম্মু ও নানু ডাকত। আমার মেয়ে ভালোই ছিল। কিন্তু হাসপাতালে নার্সদের ডেকেও পাওয়া যেত না। তাঁদের অবহেলা ছিল। এগুলো বলে আর কী হবে? আমার মেয়েকে তো আর পাব না। ঘর থেকে বের হলাম মেয়েসহ। ফিরলাম খালি হাতে।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। বিভাগে ডেঙ্গুসহ সব মিলিয়ে তিনগুণ রোগী থাকে। সবাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন সেবা দিতে। জনবল কম। নার্সদের সংখ্যাও কম। তারপরও কোনো রোগীর প্রতি অবহেলা কাম্য নয়।
মেহেরিমসহ চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ১৪ শিশু। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা) চট্টগ্রামে নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ জন। একই সময়ে মারা গেছেন একজন। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত ২ হাজার ৪০৯। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৬৮ জন। আর চলতি মাসে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯৪৪ জন। এ সময়ে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।